Essay

রচনা পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

রচনা পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – [ঢা বো.-‘০২, ০৬. ‘১০, চ. বো.- ০২.০৩, ০৬, কু. বো. – ‘০৫, ‘১২, বা বো- ০৩, ০৬, ১১, সি. বো.-০২]

ভূমিকা:

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার –  আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশ একদিন এই ধরণীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটেছিল। লীলমায়ী প্রকৃতি বিশ্বপ্রাণের ধাত্রী স্বরূপ, প্রাণকে অনুকূল পরিবেশ দিয়ে তিনি তাকে ব্যাপ্ত করে তুলেছেন। এলো উন্নত মস্তিষ্কবান মানুষ। সূচিত হল অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রকৃতির সাথে তার আপোষহীন

সংগ্রাম। সভ্যতার অগ্রযাত্রার সাথে সাথে মানুষ যেন প্রকৃতির স্নেহময় অঞ্চল হতে বিচ্ছিন্ন হতে চাইলো, দ্রুত বংশবিস্তার এবং বিজ্ঞানের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার মধ্যস্ততায় পৃথিবীতে ডেকে আনা হল অতি যান্ত্রিকতা ও নাগরিক সভ্যতার সর্বব্যাপী পচন ও বিকৃতি । প্রকৃতির শাস্তি, শ্যামল রূপকে সংহার করে মানুষ সেখানে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে ভোগের উপকরণ। আপন জননীর সংহার লীলার মধ্য দিয়ে সে যেন মেতে উঠলো আত্মহননে। পরিবেশ আজ আর নেই সেই প্রথম দিনের বিশুদ্ধতার প্রতিশ্রুতি। নেই জীবনের সুনির্ভর আশ্বাস। নির্বিচারে প্রকৃতি সংহার এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন আবহাওয়া দূষণের মধ্য দিয়ে মানুষ পৃথিবীতে ডেকে এনেছে ক্ষয় ও অবক্ষয়ের মহামারী।

“অন্ন চাই, প্রাণ চাই, আলো চাই, চাই মুক্ত বায়ু চাই বল,

চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু। ”

-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

পরিবেশের স্বরূপ:

আমরা যে স্থানে বসবাস করি সে স্থানে এবং তার আশেপাশের অবস্থানকে পরিবেশ বলা হয়। ঘর বাড়ি, দালান-কোঠা-গাছ-পালা-নদীনালা-মাটি বায়ু বিষয় সম্পত্তি ও সব কিছু মিলেই তৈরী হয় পরিবেশ। মানুষের আচার ব্যবহার ও জীবন ধারণ পদ্ধতি পরিবেশের দ্বারা দ্যাপকভাবে প্রবাড়িত হয়। আবার বিজ্ঞান প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সমাজ দ্বারাও পরিবেশ প্রভাবিত হয়। এভাবে জীবজগৎ ও তার পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকার উপকরণের আদান-প্রদান চলে। আদান-প্রদানের ভার সাম্যের উপর জীবনের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এ ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে তাকে বলা হয় পরিবেশ দূষণ।

 

পরিবেশ দূষণের সূত্রপাত ও ইতিবৃত্তঃ

ধারণা করা হয় আদিম যুগের পৃথিবীতে যখন থেকে আগুনের ব্যবহার শুরু হয় তখন থেকেই প্রাণ প্রদায়ী অক্সিজেনের ধ্বংস শুরু হয়। এই অক্সিজেনের ধ্বংসের সাথে সাথে কেবল পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলো না বরং ধোয়া ও ভস্ম কণায় পরিবেশকে করে তুললো কলুষিত। এ দূষণ সমস্যা হিসেবে দেখা দেয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে শিল্প বিপ্লবের শুরু থেকে। অতঃপর ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে এসে দেখা গেল, এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করে পৃথিবীর জন্য এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পরিবেশ দূষণের শ্রেণিবিভাগ:

পরিবেশ প্রধান দু’ভাবে দূষিত হতে পারে। এক প্রাকৃতিক ভাবে। দুই কৃত্রিম উপায়ে । প্রাকৃতিক দূষণের মধ্যে রয়েছে সীসা, পারদ, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন-ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি। কৃত্রিম দূষণের মধ্যে রয়েছে কীটনাশক, প্রসাধন সামগ্রী, প্লাস্টিক, গুঁড়ো সাবান ইত্যাদি। ক্লিক করুন এখানে

পরিবেশ দূষণের কারণঃ

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ, পানি, মাটি, বায়ুর উপর প্রচণ্ড চাহিদা চাপ পড়েছে। শুরু হয়েছে বন সম্পদ ধ্বংসের উল্লাস। একই সাথে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে উদ্ভিদ জগৎ ও প্রাণীজগৎ। প্রকৃতি ও পরিবেশের ভারসাম এসে পৌঁছেছে এক সংকটজনক অবস্থায়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ক্রমবর্ধমান হারে শক্তি উৎপাদনের চাহিদা। শক্তি উৎপাদনের সাথে নির্গত হয় মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ দূষণের এ কারণের মধ্যে অন্যতম হলো-

১)  জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ

২). বনজ সম্পদ ধ্বংস:

৩).  রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার:

৪).  বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার:

৫). যুদ্ধ ও সংঘর্ষ:

৬). পানি দূষণ:

৭). তেজস্ক্রিয় দূষণঃ

৮). শব্দ দূষণ:

৯). বায়ু দূষণ:

১০). গ্রীন হাউজ এ্যাফেক্ট:

১১). মাটি দূষণ:

 

জনসংখ্যা বৃদ্ধিঃ

সম্প্রতিকালে পরিবেশ দূষণের বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করেছে। জটিল আর প্রধান কারণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির আধিক্য। মানুষের সংখ্যা বাড়ার ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে প্রকৃতির মধ্যে। মানুষ বেশি হাওয়ায় যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া খুবই ক্ষতিকর। মানুষ বৃদ্ধির জন্য কোলাহল বেড়েছে। অপরিকল্পিত ভাবে দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বাসস্থান, খাদ্য, শিক্ষা এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

বনজ সম্পদ ধ্বংস:

পরিবেশ রক্ষার জন্য দেশের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ সরকারি হিসেবে ১৬ শতাংশ হলেও বাস্তবে ৯ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধিও চাপে প্রতিবছর উজার হচ্ছে ১.৪ শতাংশ ফলে ভূমিক্ষয়ের মাত্রা বাড়ছে। বন্যা প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে এবং দেশের গড় তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে।

 রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার:

উন্নত ও ভাল জাতের ফসল ফলানের জন্য কীট পতঙ্গেও হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করার জন্য কৃষকরা অপরিকল্পিতভাবে এবং ব্যাপক হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে থাকে। এর ফলে জীব জগৎ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে নিপতিত হচ্ছে।

 বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের অপব্যবহার:

পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী অপদ্রব্যগুলো হলো সীসা, পারদ, সালফার-ডাইঅক্সাইড, কার্বন-মনো-অক্সাইড ইত্যাদি। এদের মধ্যে কার্বন কতগুলো আবার আমাদের মল-মূত্র ও শরীরের পচন থেকে উৎপন্ন হয়। এসব প্রতিনিয়ত বায়ু দূষিত করছে। কার্বন কণা থেকে শুরু করে

ভারী ধাতু, জটিল জৈব যোগ, জীবাশ্ম জ্বালানী, নিউক্লিয়ার আবর্জনা ক্লোরো ফ্লোরো মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি পরিবেশ দূষিত করছে। এর ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।

যুদ্ধ ও সংঘর্ষ:

যুদ্ধ ও সংঘর্ষ কেবল জান ও মালের ক্ষতি করে না। পাশাপাশি এটা পরিবেশও বিপর্যস্ত করে। যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক অস্ত্রের জীবাণু মানব জীবন ও পরিবেশকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের উপর নিক্ষিপ্ত পারমাণবিক বোমার কারণে পরিবেশ মারাত্মক ভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ দিয়েছিল, অসংখ্য মানুষ বিকলাঙ্গ হয়েছিল।

পানি দূষণ:

জৈব আবর্জনা, জীবানুসমূহ, উদ্ভিদের পুষ্টিকর পদার্থসমূহ, কৃত্রিম জৈব পদার্থসমূহ, অজৈব রাসয়নিক পদার্থ, পানিবাহিত পলি ও তলানি, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, উষ্ণপানি, তৈল ইত্যাদি প্রতিনিয়ত পানি দূষণ করে।

তেজস্ক্রিয় দূষণঃ

পারমাণবিক যুদ্ধ ও পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্যে তেজষ্ক্রিয় দূষণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। ১৯৬৩ সালে একটি মার্কিন নিউক্লিও সাবমেরিন আটলান্টিক সাগরে চির দিনের জন্য নিমজ্জিত হয় এবং তা থেকে প্রচুর তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রাকৃতিক পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। রাশিয়ার চেরনাবিল বিস্ফোরণের ফলে তেজস্ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া এখনও রাশিয়ার মানুষ বহন করে চলছে।

শব্দ দূষণ:

বর্তমানে শব্দও দূষণ প্রক্রিয়ার উল্লেখযোগ্য উপাদান। যানবাহনের জোরালো হর্ণ, কল-কারখানার নির্গত শব্দ, নির্মাণ কাজের শব্দ, নির্বিচারে লাউড স্পীকারের শব্দ, উড়োজাহাজের শব্দ ইত্যাদি শব্দ পরিবেশ বিপর্যস্ত করেছে। এর ফলে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা লোপ পায়। মানসিক বিপর্যয় দেখা দেয়, রক্তচাপ বেড়ে যায়।

বায়ু দূষণ:

বায়ু দূষণের প্রধান কারণ হলো কার্বন ডাই অক্সাইড, কার্বন মনো অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোজেন ক্লোরাইড, হাইড্রোকার্বন সমূহ, নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমূহ। কলকারখানার, গাড়ী ইত্যাদির কালো ধোঁয়া বায়ু দূষণ করছে। ফলে পরিবেশ হচ্ছে বিপর্যস্ত। )

গ্রীন হাউজ এ্যাফেক্ট:

বিজ্ঞানীদের মতে আগামী ৮০ বছরে এ গ্রীন হাইজ প্রক্রিয়ার ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা ৫° (পাঁচ ডিগ্রী) বৃদ্ধি পাবে। এতে পৃথিবীর মেরু অঞ্চলের ৬০ লক্ষ বর্গমাইল এলাকা জুড়ে পৃথিবীর মোট জলভাগের ৭০% পানি যে বরফস্তরে জমে আছে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এন্টার্কটিকা মহাদেশের এ বিশাল বরফরাশি গলতে শুরু করবে।

মাটি দূষণ:

অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি নগর আবর্জনা, শিল্প আবর্জনা, (কঠিন, তরল, জৈব, অজৈব রাসায়নিক সার ও কীটনাশক, তেজস্ক্রিয় আবর্জনা, খনিজ আবর্জনা ইত্যাদি মাটি দূষণের জন্য দায়ী যা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব হানে।

পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশের অবস্থা:

বাংলাদেশে পরিবেশ দূষণ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সর্বত্রই এই দূষণ বিস্তার লাভ করেছে। তবে সবচেয়ে আশংকাজনক অবস্থা রাজধানী ঢাকায়। এখানে স্বাভাবিকের চেয়ে চার-পাঁচগুণ বেশী বিষাক্ত গ্যাস নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, কার্বন মনোক্সাইড প্রভৃতির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে তিন হতে পাঁচ গুণ বেশী। বর্তমানে ঢাকার বাতাসে সীসার পরিমাণ পৃথিবীর যে কোন শহর বা শিল্পাঞ্চলের চেয়ে বেশী। ঢাকার শব্দ দূষণের মাত্রা মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এইরূপ দূষণ জনস্বাস্থ্যের প্রতি মারাত্মকা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ঢাকাকে বর্তমানে মেগাসিটি বলে।

ধরিত্রী সম্মেলন এবং বিশ্বপরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকার:

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP) ও বিজ্ঞানীদের সময়োচিত তৎপরতায় ১৯৮৭ সালে কানাডায় মন্ট্রিলপ্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এই প্রটোকলের আওতায় একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওজনস্তর ক্ষয়কারী বস্তুসমূহের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে। ১৯৯২ সালে ৩রা ও ১৪ই জুন ব্রাজিলের রিওডি জেনিরোতে অনুষ্ঠিত ‘ধরিত্রী শীর্ষ সম্মেলনে’ পরিবেশের সাথে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের যোগসূত্র খুঁজে বের করা হয় এবং সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয় প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার ওপর। অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র অভিযাত্রী ইয়ান জিয়েনান সমুদ্র দূষণ প্রত্যক্ষ করে ১৯৯৩ সালে ‘বিশ্ব পরিচ্ছন্ন আন্দোলন’ -এর সূত্রপাত করেন। জাতিসংঘ পরিবেশ বিভাগের সহায়তায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১২০টি দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ এ অভিযানে শরিক হয়।

 বিশ্ব পরিবেশ দিবস:

পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ কল্পে জাতিসংঘের নির্দেশে প্রতিবছর ৫ই জুন ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ পালিত হচ্ছে সারা বিশ্বে। বিজ্ঞানের ক্রমাঅগ্রগতির সাথে সাথে বিশ্বপরিবেশ কিভাবে দূষিত হচ্ছে তা বিশ্ববাসীর গোচরে আনা এবং সেই সাথে পরিবেশ রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করাই এ দিবস পালনের উদ্দেশ্য।

পরিবেশ সংরক্ষণে ব্যক্তিগত ভূমিকা:

প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রত্যেকেই ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি, যার সামগ্রিক অবদান হবে বিরাট। আমাদের কাজ হবে-

১).পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা: যত্রতত্র বর্জ্য বা আবর্জনা না ফেলে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা;

২). সম্পদ সংরক্ষণ: পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ব্যবহারে যথাসম্ভব সাশ্রয়ী হওয়া এবং খাদ্যদ্রব্যসহ সব ধরনের সম্পদের অপচয় কমানো। সব ধরনের বিলাসিতা বর্জনের চেষ্টা;

৩). ক্ষতিকর সিনথেটিক বর্জন: পলিথন ও প্লাস্টিক জাতীয় যে সব দ্রব্য প্রকৃতিতে আপনা আপনি ক্ষয় না হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে সেগুলো বর্জন করা এবং এর পরিবর্তে পাট জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করা;

৪). নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার: কাঠ, কয়লা, তেল ইত্যাদি যেসব জ্বালানি পরিবেশের দূষণ ঘটায় সেগুলো যথাসম্ভব কম ব্যবহার করা এবং তার পরিবর্ত সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার কারা;

৫). উন্নত ও দূষণমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহার: ঘরবাড়ি কিংবা কলকারখানায় যথাসম্ভব দূষণহীন প্রযুক্তি ব্যবহার; CNG চালিত Auto-এর ব্যবহার ফলে পরিবেশ কম দূষিত হচ্ছে।

৬). বেশি বেশি গাছ লাগানো: পরিবেশ সংরক্ষণে বেশি বেশি গাছ লাগানো।

৭). বৃক্ষরোপণে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগ: বাংলাদেশ সরকার পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখার জন্য পরিবেশ আদালত গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বর্তমান সরকারের পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধকরণ কার্যক্রমের ভূমিকা সর্বসাধারণের প্রশংসা অর্জন করেছে। এছাড়াও নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে-

ক). হস্তচালিত তাঁতশিল্প গঠনের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণমুক্ত রাখা।

খ). যানবাহনের ফিটনেস সরকার যথাযথ পরীক্ষা করবে এবং বর্তমান সরকারের গৃহীত এই পদক্ষেপ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

গ). গাড়ির কালো ধোঁয়া প্রতিরোধে সরকারকে আইন প্রণয়ন করতে হবে।

ঘ). পেট্রোল পদ্ধতিতে গাড়ি রূপান্তরে সুপারিশ করতে হবে।।

ঙ). সর্বোপরি জীবন যাত্রা বিপন্নকারী সর্বপ্রকার দূষণের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টির ব্যাপারেও সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

উপসংহার:

পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার বা কোনো সংস্থা বা ব্যক্তি-বিশেষের নয়, এ দায়িত্ব সকল বিশ্ববাসী প্রতিটি ব্যক্তির । যারা অজ্ঞতাবশত পরিবেশ দুষণে যুক্ত হচ্ছেন তাদের যেমন সচেতন করা প্রয়োজন তেমনি যারা অতি মুনাফার লোভে জেনেশুনেও পরিবেশের তোয়াক্কা করে না তাদের কাঠোর শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশের সাথে মানুষের জীবন-মরণ সমস্যা জড়িত। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রাণ দাত্রী প্রকৃতি আবার প্রতিষ্ঠিত হবে ধাত্রী মাতার আসনে, জননীর সেই নির্মল রূপের মধ্যে লাভ করব মুক্ত প্রাণের আশ্বাস এ প্রত্যাশা আজ সকলের ।

কবির ভাষায়- ” এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি- নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

– সুকান্ত ভট্টাচার্য

  • পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
  • পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা
  • পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button