Sura

সূরা আল ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ । Sura Al-Fathiha Bangla

সূরা আল ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ । Sura Al-Fathiha Bangla

 

সূরা আল ফাতিহা আমাদের মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১ নম্বর সূরা । ফাতিহা শব্দটি আরবি ফাতহুন শব্দজাত যার অর্থ উন্মুক্তকরণ। এটি আল্লহ’র তরফ থেকে বিশেষ উপহার। সূরা ফাতিহা অন্যান্য সূরার ন্যায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু। আল ফাতিহা সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে বিধায় মক্কী সূরা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।

 

সূরা আল ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ :

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহির রহমা-নির রহি-ম।

অনুবাদ : শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।

الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ

উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আ -লামি-ন।

অনুবাদ : যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।

الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

উচ্চারণ : আররহমা-নির রাহি-ম।

অনুবাদ : যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।

مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ

উচ্চারণ : মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।

অনুবাদ : বিচার দিনের একমাত্র অধিপতি।

إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ

উচ্চারণ : ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’-ন

অনুবাদ : আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।

اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ

উচ্চারণ : ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’-ম

অনুবাদ : আমাদের সরল পথ দেখাও।

صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ

উচ্চারণ : সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন।

অনুবাদ : সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

 

সূরা আল ফাতিহা এর সূরার নামকরণ الفتح অর্থ :

খোলা, সূচনা বা আরম্ভ করা। الفاتحة অর্থ: উপক্রমণিকা। কুরআনে কারীমের সূরাসমূহের ধারাবাহিক ক্রমানুসারে এ সূরাটি প্রথম এবং এর মাধ্যমে কুরআন সূচনা করা হয় । তাই এর নাম সূরায়ে ফাতিহা বা কুরআনের উপক্রমণিকা। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের গবেষণামতে, অবতরণের দিক দিয়েও পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এটিই প্রথম। সূরা আলাক্ব, মুয্যাম্মিল ও মুদ্দাসসিরের কিছু আয়াত সূরা ফাতিহার আগে অবতীর্ণ হলেও পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এ সূরার অবতরণই প্রথম । এ জন্যই এ সূরার নাম ‘ফাতিহাতুল কিতাব’ বা কুরআনের উপক্রমণিকা রাখা হয়েছে। এ সূরা কুরআনে কারীমের মৌলিক বিষয়সমূহের সারসংক্ষেপ। তাই এ সূরার একটি নাম ‘উম্মুল কুরআন’ ও ‘উম্মুল কিতাব’ বা কুরআনের মূল। এ সূরাকে ‘আস সাবউল মাসানী বলেও অভিহিত করা হয়। আল ইতক্বান গ্রন্থে এ সূরার বিশোর্ধ্ব নাম উল্লেখ করেছে।

 

ফাতিহা’ শব্দের অর্থ শুরু, আরম্ভ, উদ্বোধন, উদঘাটন প্রভৃতি। কুরআনুল কারিমের ১১৪টি সূরার মধ্যে প্রথম সূরাটি হলো সূরাতুল ফাতিহা। আর এ জন্য সূরা ফাতিহাকে ‘ফাতিহাতুল কুরআন’ বা কুরআনের শুরু বলে অভিহিত করা হয়। সূরা ফাতিহাকে সূরাতুল হামদ, উম্মুল কুরআন, আসসাবউল মাছানি, ওয়াকিয়াহ, সূরাতুল কাফিয়্যাহ, সূরাতুল কানয, সূরাতুশ শিফা ও সূরাতুল আসাস নামেও অভিহিত করা হয়। সূরা ফাতিহার প্রত্যেকটি বাক্য ও শব্দ উচ্চারণ করা সহজ। যে কেউ ইচ্ছা করলে সূরা ফাতিহা সহজে মুখস্থ করতে পারে। মক্তব, মাদরাসা ও মসজিদে কুরআনুল কারিমের প্রথম সবক সূরা ফাতিহার মাধ্যমে দেয়া হয়। সালাত আদায়ের জন্য কুরআনুল কারিম থেকে প্রথম যে দশটি সূরা মক্তব-মাদরাসায় পড়ানো হয়। এ ক্ষেত্রে সূরা ফাতিহা প্রথম পড়ানো হয়। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে দান করেছি পুনঃপুনঃ আবৃত্তির সাতটি আয়াত।’ (সূরা হিজর: ৮৭)। বেশির ভাগ মুফাসসিরে কুরআনের অভিমত হলো, পুনঃপুনঃ পাঠের জন্য যে সাতটি আয়াতে কালিমার ইঙ্গিত সূরা হিজরের মধ্যে এসেছে তা সূরা ফাতিহার কথা বলা হয়েছে। প্রত্যেক নামাজে সূরা ফাতিহা পুনঃপুনঃ পাঠ করা হয় বলে এ সূরাকে ‘সূরাতুস সালাত (নামাজের সূরা)ও বলা হয়। এ সূরার সাতটি আয়াতের প্রথম চারটি আয়াতে আল্লাহর প্রশংসা এবং শেষ তিনটি আয়াতে বান্দার প্রার্থনার কথা বর্ণনা করা রয়েছে।

 

হজরত আবু সাঈদ ইবনে মুয়াল্লা রা: বর্ণিত হয়েছে। একদা হজরত রাসূল সা: বললেন, আমি কি মসজিদ থেকে বের হওয়ার আগে তোমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতর সূরা শিক্ষা দেবো না? তারপর যখন মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলাম, তখন বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি না আমাকে কুরআনের শ্রেষ্ঠতর সূরা শেখাবার কথা বলেছিলেন? তিনি বললেন, তা হলো সূরা ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন’। এটিই সেই সাতটি পুনঃ আয়াত এবং আমাকে প্রদত্ত মহা কুরআন। (বুখারি)। হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, এক সময় জিব্রাঈল আ: নবী করিম সা:-এর কাছে বসা অবস্থায় উপর দিক থেকে একটি দরজা খোলার আওয়াজ শুনে উপর দিকে মাথা উঠিয়ে বললেন, আকাশের এ দরজাটি আগে আর কখনো খোলা হয়নি। নবী করিম সা: বললেন, ওই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা নেমে আসতে দেখলাম। জিব্রাঈল আ: বললেন, এই ফেরেশতা জমিনে এর আগে আর কখনো নামেনি। নবী করিম সা: বললেন, ওই ফেরেশতা আমাকে বলল, দু’টি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে। যা আপনার আগে কোনো নবী আ:-কে দেয়া হয়নি। তা হলো সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষাংশ। (মুসলিম)।

 

সূরা ফাতিহার ফজিলতের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। ‘খাজিনাতুল আসরার’ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ফজরের সুন্নত নামাজ আদায় করে ফরজ নামাজ আদায়ের আগে কেউ যদি বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা ৪০ বার পাঠ করে তাহলে ওই ব্যক্তি নিঃসন্তান থাকলে সন্তান হবে, বেকার থাকলে চাকরি হবে, ঋণ থাকলে ঋণ পরিশোধের উপায় হয়ে যাবে, সম্পদহীন থাকলে সম্পদ লাভ হবে, অসুস্থ থাকলে সুস্থ হয়ে যাবে ও বিপদাপন্ন হলে উদ্ধার পেয়ে যাবে’। হজরত আলী রা: বলেছেন, কোনো বিপদে পতিত ব্যক্তি এক হাজার বার সূরা ফাতিহা পাঠ করলে ওই ব্যক্তির আর বিপদ থাকতে পারে না। হজরত ইমাম জাফর সাদেক রা: বলেছেন, ‘৪১ বার সূরা ফাতিহা পাঠ করে পানিতে ফুঁক দিয়ে কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে খাওয়ালে অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যাবে’। (তাওয়ারিখে মদিনা)। এ ছাড়া কুরআনের একটি হরফ বুঝে পাঠ করলে ১০টি নেকি লাভ হয়। সূরা ফাতিহায় ১২৫টি হরফ রয়েছে। ১২৫টি হরফ যিনি পাঠ করবেন তার আমল নামায় ১২৫০টি নেকি দান করা হয়।

সূরা আল ফাতিহা বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ । Sura Al-Fathiha Bangla

Also read: সূরা আল-কদর (বা ক্বদর) 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button