Essay

একটি শীতের সকাল রচনা

একটি শীতের সকাল রচনা

শীতের সকাল –  [ব. বো-০২, ০৬, ০৯, ১৪, সি. বো,-‘০৯, ১৩, কু. বো. ০৩,০৫,০৬, ১৪, দি. বো.-০৯, বা. বো. ১১, চ. বো. ১২]
ভূমিকাঃ
শীতের সকাল – এসেছে শীত গাহিতে গীত বসন্তের জয়,
                        যুগের পরে যুগান্তরে মরণ করে নয়।’ -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বসন্তের আগমনী বার্তা বয়ে নিয়ে প্রকৃতির বুকে নেমে আসে শীত। কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে সে আসে আমাদের মাঝে। আর শীতের সকাল মানব মনে সঞ্চার করে বিচিত্র অনুভূতি। শীত যেন এক উদাসী বাউল। এ বাউলের একতারায় ধ্বনিত হয় সর্বদা বৈরাগ্যের সুর। শীত এসে মানুষকে করে তোলে প্রাণ চঞ্চল ও আনন্দমুখর। মানুষ তখন নিজেকে নানা আভরণে সাজিয়ে তোলে। click here
বৈশিষ্ট্য:
ঋতু চক্রে শীতের স্থান পঞ্চম। বছরের শীতলতম ঋতু এটি। বাংলা বর্ষপঞ্জিমতে পৌষ ও মাঘ এ দু’মাস শীতকাল। কিন্তু এর প্রভাবশুধু এ দু’মাস নয়, আরো কয়েক মাস অনুভূত হয়। শীতকাল প্রধানত শুষ্ক। এ সময় বৃষ্টিপাত কম হয় শীতের রাত্রি হয় দীর্ঘ। প্রবল শৈত্যপ্রবাহ বিরাজ করে বাংলার প্রকৃতির বুকে, যা কখনো প্রাণহানি ঘটায়। তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অনেক নিচে নেমে আসে।
শীতের সকাল:
শীতের সকালে কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বিরাজ করে প্রকৃতির গায়। মানুষের চোখে থাকে ঘুমের আবেশ। লেপের নিচ থেকে আর উঠতে ইচ্ছ করেনা। শীতের সকালে প্রকৃতি এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। পূর্বাকাশে মিষ্টরোদের স্নিগ্ধতা নিয়ে ঝলমলিয়ে ওঠে দিবাকর। কুয়াশার ঘনঘটা ক্রমান্বয়ে ম্লান হয়ে আসে। উত্তর দিকে থেকে হিমেল হাওয়া শিরশির করে গাছপালার ফাঁক দিয়ে বয়ে চলে। গাছের পাতা থেকে টুপটুপ করে শিশির ঝরে পরে। বনের মেঠো পথ শিশিরে সিক্ত হয়। বনের দু’ধারে ঘাসের ডগায় সঞ্চিত শিশির বিন্দু সকালের মিষ্টি রোদে যেন মুক্তার মতো জ্বলে।শাখীর শাখে পাখিরা নিদ্রা ত্যাজে মৃদু কোলাহলে মেতে ওঠে। খেজুর গাছে ঝুলন্ত থাকে রসের হাড়ি। তাকে সঞ্চিত রস সৌরভ বাতাসে ভেসে বেড়ায়, আমোদিত হয় চৌদিক। শীতের সকালে সর্ষে ফুল ফোটে। অলিকুল মধুলোভে গুঞ্জন করে বেড়ায়। গ্রামের সাধারণ মানুষ যারা মাঠে কাজ করে, কানে-মাথায় গামছা বেঁধে পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে নগ্ন পায়ে মাঠে বেরিয়ে পড়ে। হেমন্তের পাকা ধান ঘরে তোলবার সময় এটা। এ সময় কৃষাণেরা লাঙল-জোয়াল ও বলদ নিয়ে মাঠে ছুটে চলে। রবিশস্যের সবুজতা মনকে উদ্বেল করে তোলে। পথ চলতে পা জড়িয়ে ধরে মটরশুটি আর সর্ষেফুল। তাইতো কবি বলেছেন-
                                                                                                           “ সরষে বালা নুইয়ে গলা হলদে হাওয়ার সুখে,
                                                                                                             মটর বোনের ঘোমটা খুলে চুম দিয়ে যায় মুখে।”
রূপবদল:
প্রকৃতির পালাবদলে হাওয়ায় শীত আসে রিক্ততার আর শূন্যতার ডালি নিয়ে প্রকৃতির ও ঘটে অপরূপ রূপবদল মাঠগাট হয় পসল হীন। মীতের তীব্রতায় গাছের পত্ররাজি হলুদ রং ধারণ করে, পরে ঝরে যায়। সকালের কুয়াশার ঘোর কেটে বেলা বাড়তে থাকে। মানুষ বিছানা ছেড়ে শীতে মিষ্টি রোদে গা এলিয়ে দিয়ে রোদ পোহায়। এ সময় খড়কুটা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে চারপাশে বসে তাপ নেয়া হয়। দূরে রাখাল বালক বাঁশি বাজায়। মাঠে লেজ দুলিয়ে গরুগুলো আনন্দে বিচরণ করতে থাকে। রৌদ্রতাপ ক্রমশ বাড়তে থাকে। কমে আসে হীম-শীতল বাতাসে তীব্রতা। ক্লিক করুন
শহুরে শীতের সকাল:
শহর-গ্রাম নির্বিশেষে শীত তার আন স্বাতন্ত্র্য নিয়ে নেমে আসে বাংলার বুকে। তবে শহরের একটি শীতের সকালের রূপহয় ভিন্ন প্রকৃতির। এখানে শীতের তীব্যতা একটু কম। শহরে ইটের পরে ইট প্রকৃতিকে উপভোগ করতে দেয়না। হীম-শীতল পরশ মাখা বাতাস উত্তর দিক থেকে শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যায়। তবে তাতে খেজুর রসের মন মাতানো গন্ধ থাকেনা। সর্ষে ক্ষেতের হলুদকান্তি আর ভ্রমরের গুঞ্জন দৃষ্টিগোচন হয়। না। শহরের একটি শীতের সকাল মূলত কাকের কলতান, কলের শব্দ, বাস-ট্রাকের শব্দ, আর পেট্রোল-ডিজেলের গন্ধে মুখরিত থাকে। পুরো রাস্তাভরে অফিস কর্মীদের ছুটাছুটি। প্রকৃতির স্নিগ্ধ কোমল স্নেহের পরশ উপভোগ করার সৌভাগ্য শহরবাসীদের হয় না। শহরে শীত আসে খুশির আমেজ নিয়ে। নানা সাজে, নানা রঙে সাজিয়ে তোলে নির্জীব শহরকে। শীতের মৌসুমে শহরে খেলাধুলার আসর বসে। বনভোজনের আনন্দ উপভোগের জন্যে ছেলে-মেয়েরা একশহর থেকে অন্য শহরে ছুটে যায়। ছুটির দিনে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্যে চলে ঘোরাঘুরি। ফলে নির্জীব শহরে নানা আনন্দে হয়ে ওঠে প্রাণময়।
গ্রামে শীতের সকাল:
প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতি তার পূর্ণাঙ্গ রূপমাধুরী নিয়ে ধরা দেয় গ্রামবাংলাতেই। গ্রামীণ প্রকৃতিতে শীতের সকাল এক বিশেষ তাৎপর্যবাহী। হালকা হিমেল বাতাস বয়। কিষাণেরা সোনালি ফসল বোঝাই গরুর গাড়ি গাঁয়ের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ বেয়ে নিয়ে চলে। তাদের মনে থাকে দারুণ আনন্দ । শীত কাটানোর জন্যে সে চড়া গলায় গান ধরে-
                                                                                                                ওকি গাড়িয়াল ভাই-
                                                                                                                কত রত আমি পন্থের পানে চাইয়ারে……. ‘
শীতের প্রকৃত রূপ ধরা পড়ে গ্রামের পরিবেশে। গরিব পিতা-মাতার ছোট ছেলে-মেয়েরা বস্ত্রাভাবে ঠকঠক করে কাঁপে। আর একটু রৌদ্রের পরশ পাবার জন্যে হাত-পা গুটিয়ে ভাঙ্গা বেড়ার পাশে সূর্যের সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। খড়কুটা দিয়ে আগুনের কুণ্ড তৈরি গ্রামের আশীতিপর বৃদ্ধও ছোট্ট ছেলে-মেয়েরা আগুনের উত্তাপ উপভোগ করে। আর মিষ্টি মধুর সুরে তারা বলাবলি করে নানা ধরনের গল্প কথা। আস্তে আস্তে কুয়াশা কেটে যায়। সকাল বেলার সোনালি রোদ গাছের ফাঁক দিয়ে উকি মারে। কিশোরদের মধ্যে উৎসবের সীমা থাকেনা। তারা ছুটে গিয়ে যেখানে রোদ সেখানে দাঁড়ায়। পল্লিগ্রামে শীতের সকাল আরো বেশি উপভোগ্য হয়ে ওঠে শীতের পিঠা খাওয়ার মাধ্যমে। কবি বলেছেন- ‘
                                                                                                          পৌষ মাসে পিঠা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে,
                                                                                                           আরো উল্লাস বেড়েছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।’
শীতের সকালে খাবার সামগ্রী:
শীতকালে রকমারি খাবার তৈরি হয়। গাঁয়ের বধূরা এ সময় পিঠ-পায়েস তৈরির আনন্দে মেতে ওঠে। ঘরে ঘরে চলে পিঠা তৈরির ধুম। শীতের সকালে নরম রোদে বসে ভাপা পিঠা খাওয়া আরো মজাদার। শুধু গ্রামে নয়, শহরেও রাস্তার মোড়ে মাড়ে এ পিঠা বানিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়া রস পিঠা, তেলের পিঠ, পাটিসাপটা, ভাপাপুলিসহ আরো নানা রকম শীতের পিঠায় ভরে ওঠে। এ শীতের সকালে খেজুর রসের গুড় দিয়ে মুড়ি খাবার মজাটাও কম আনন্দের নয়। শীতের সকালে পান্তাভাত ভাজা কৈ মাছের স্বাদ সত্যিকারেই মনকে ভুলিয়ে দেয়। এ সময় বাজারে বিভিন্ন মিঠাপানির মাছ ও তরতাজা শাক-সবজি পাওয়া যায়।
উপসংহার:
শহরে শীত খানিকটা অবগুণ্ঠিত। তার পরও শীতের সকালের আবেদন কারোকাছেই নিতান্ত তুচ্ছ নয়। শস্যহীন মাঠ আর পাতা ঝরা গাছের মলিনতা থাকলেও ঘরভরা সোনালিফসলের পূর্ণতা মানুষের মনে অনাবিল আনন্দের পরশ বুলিয়ে দেয়। ক্ষণস্থায়ী শীতের সকাল মানুষের মনে তার পরশ বুলিয়ে যায়। দেখা যায় কেমন কাঠিন স্পর্শ। তাই শীতের সকালে বাঙালি জীবনে স্মৃতিময় হয়ে থাকে ।
  • একটি শীতের সকাল রচনা
  • একটি শীতের সকাল রচনা
Seen by Salma Sultana at 8:41 PM
   সাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button