মানপ্ত্র
অধ্যক্ষর অবসর গ্রহণ জনিত বিদায় উপলক্ষে একটি মানপত্র

তোমার কলেজের অধ্যক্ষর অবসর গ্রহণ জনিত বিদায় উপলক্ষে একটি মানপত্র লেখ।
প্রফেসর এ বি এম আফাজ উদ্দিন এর অবসর গ্রহণ জনিত বিদায় উপলক্ষে-
শ্রদ্ধাঞ্জলি/সন্মানপত্র
হে মহান শিক্ষা শুরু
আজ থেকে ৩৩ বছর আগে এই প্রিয় বিদ্যাপীঠ থেকেই তোমার কর্মজীবনের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল। তার পর একে একে সরকারের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর, চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ও নরসিংদী সরকারি কলেজে শিক্ষকতা শেষে করে তুমি আবার ফিরে এলে তোমার স্মৃতি বিজড়িত এই বিদ্যাপীঠে। এ যেন কালীদাসের মেঘদূতের মতই জায়গায় বসে বিশ্বদর্শন। এই সুদীর্ঘ পথ পরিভ্রমণে তুমি যখন অনেক বেশি প্রাজ্ঞ, অভিজ্ঞ ও সৃষ্টিক্ষম চঞ্চল ঠিক তখনই বিউগলে বেজে উঠল বিষাদের করুণ সুর। অজস্র প্রিয় জন হারানোর বেদনায় স্মৃতি ভারাক্রান্ত এই শিক্ষাঙ্গন তোমার মত স্বজনকে ফিরে পেয়ে নতুন আশায় বুক বেঁধেছিল। উন্নয়ন আর প্রাপ্তির আনন্দে ভুলে গিয়েছিল, ফিরে পাওয়া সন্তানকে আবার হারাতে হবে, কষ্টে পাওয়া অতীতকেও আবার ভুলে যেতে হবে। তোমার পদস্পর্শে এই কলেজ ক্যাম্পাস আজ মুখরিত, ১৫ হাজার শিক্ষার্থী আজ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যা চর্চায় নিমগ্ন, শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী তোমার মতো অভিভাবক পেয়ে আজ নিশ্চিন্ত ভাবনাহীন। তাই তোমাকে বিদায় জানাতে আমাদের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে।
হে মহান কর্মবীর
তুমি এলে, জয় করলে এবং চলে গেলে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ে তুমি আমাদের দিয়েছ অনেক – দশ জন শিক্ষকের নতুন স্থায়ী পদ সৃষ্টি করেছ, চারটি বিষয়ে নতুন অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু করেছ, বিজ্ঞান ভবন সম্প্রসারণ কলেছে, প্রশাসনিক ভবনের সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। ১২ হাজার শিক্ষার্থীর বিদ্যাপীঠ আজ ১৫ হাজারে উন্নীত হয়েছে। শিক্ষা সংস্কৃতিতে ঘটে গেছে নীরব বিপ্লব। তোমার নেতৃত্বে কলেজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিতর্ক পরিষদ (TCDS), নাট্যসংসদ (ICT)। ছাত্র-শিক্ষক, অভিভাবক ও কর্মকর্তা কর্মচারীর আত্মার বন্ধন সুদৃঢ় করতে নিয়মিত করতে প্রকাশিত হচ্ছে টেলিফোন গাইড ‘যোগাযোগ’। অচিরেই বের হতে যাচ্ছে কলেজ ম্যাগাজিন ‘সুপ্তকথা’। এই কলেজের ইতিহাসে শুধু তোমার নেতৃত্বেই সম্ভব হয়েছে সকল শিক্ষকের একসাথে বান্দরবান ভ্রমণ। সম্ভব হয়েছে আনন্দ ও ঘরোয়া পরিবেশে প্রীতিভোজ করা। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ছাত্রী হোস্টেল তুমি খুলে দিয়েছো। অত্র কলেজের ছাত্র-শিক্ষক অভিভাবক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে আজ বন্ধুত্বপূর্ণ সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করেছে শুধু তোমার উদার নেতৃত্বের কারণে। তোমার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব আর আবেগ ঘন পথ নির্দেশনার কারণে এ পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই কোন রাজনৈতিক অস্থিরতা। সর্বত্র বিরাজ করছে এক সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও আনন্দময় পরিবেশ। আরও মানপত্র পেতে- ক্লিক করুন
হে মহাত্মন
গম্ভীর তোমার পথ চলা, নির্জন একাকীত্ব তোমার ভাল লাগে। তোমার উদার সহজ মানবিক আচরণ সবাইকে মুগ্ধ করে। অবিরাম সৃষ্টির প্রেরণায় চির চঞ্চল তুমি। তাই সংকীর্ণ স্বার্থপরতা তোমাকে আকৃষ্ট করে না। নির্জন একাকীত্ব তোমার সৃষ্টিশীলতাকে করে উদ্ভাসিত। তাই কর্মমুখর এই ক্যম্পাসে মাঝে মাঝে তোমার মতো প্রশাসকের উপস্থিতিই আমরা টের পাইনে। কিন্তু তোমার ক্ষুরধার দৃষ্টি সর্বত্র প্রসারিত তোমাকে এড়িয়ে চলা যায়না। তোমার কবিতা, উপন্যাস, নাটকে বার বার আমরা ধরা পড়ি। তোমার মতো একজন সৃষ্টিশীল স্বভাব কবির আমরা গুণমুগ্ধ পাঠক। তুমি আমাদের প্রিয় আফাজউদ্দিন রূপরাজ। আমরা কখনো ভীতিকর প্রশাসক হিসেবে তোমাকে দেখি নি; বরং তোমাকে পেয়েছি আমরা চির সবুজ কবি হিসেবে, মানবিক শিক্ষক হিসেবে, সর্বোপরি একজন নির্ভরযোগ্য অভিভাবক হিসেবে। তোমাকে হারাতে বসে তাই আজ আমরা সবচেয়ে বেশি আশ্রয়হীন। শুধু বার বার মনে হচ্ছে, এই শ্যামল সুন্দর বিদ্যাপীঠ থাকবে, শ্রেণিকক্ষে তোমার গুণমুগ্ধ অগণিত শিক্ষার্থী থাকবে, শিক্ষক পরিষদে হাস্য কৌতুক থাকবে, হোস্টেলে রসনা বিলাসের ব্যবস্থা থাকবে শুধু তুমি থাকবে না আমাদের মাঝে। তোমাকে বিদায় জানাতে তাই আজ আমরা ভাষাহীন, নির্বাক। ( সন্মানপত্র )
হে প্রিয় গুরুজন
মানুষ চলতে গেলে হোঁচট খায়, কাজ করলে ভুল হয়। তোমার কাছে আমাদের ভুলের শেষ নেই, অপরাধের সীমা নেই। কিন্তু আমরা জানি, তুমি উদার ক্ষমাশীল। আমাদের ভূল ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে আমাদেরকে তোমার হৃদয়ে স্থান দিও। যতদূর যাও, যেখানে থাকো মনে রেখো আমরা তোমার আত্মার আত্মীয়। কখনো ভুলনা আমাদের। সরকারি হিসেবের খাতায় সিলমোহর দিয়ে আমরা তোমাকে বিদায় জানালাম। কিন্তু ১৫ হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীর হৃদয়ের খাতা আজ খুলো দিলো। সেখানে তুমি থাকবে আমাদের সাথে। তুমি থাকবে আমাদের স্মৃতিতে, আমাদের চেতনায়, আমাদের বিশ্বাসে এই প্রিয় বিদ্যাপীঠের চার দেওয়ালের মাঝে তুমি অন্তরালে বন্দি হয়ে থাকবে। তোমার সুখ, সমৃদ্ধ ও কল্যাণকর দীর্ঘজীবন কামনা করছি। বিদায়ের এই পড়ন্ত বেলায় তোমার লেখা কবিতার ভাষায় বলছি- হে প্রিয় গুরুজন। ( সন্মানপত্র )
চলে গেলে অকালেই আলো ছুঁড়ে ছুঁড়ে
স্মৃতিরা এখনো উজ্জ্বল অমলিন
বিষাদময় স্মৃতির ঘণ্টা বাজে অহরহ
…………………………………………………………
পাব না পাব না ওগো আর কোনদিন।”
হ্যাঁ,
রূপরাজরা ‘চলে যায়
শূন্য পড়ে থাকে এ দুঃস্থ হৃদয়।’
বিনয়াবনত-
শিক্ষক পরিষদ
তারিখ: ২৪ মে, ২০২৩ খ্রি. টংগী সরকারি কলেজ গাজীপুর ।
- অধ্যক্ষর অবসর গ্রহণ জনিত বিদায় উপলক্ষে একটি মানপত্র