Essay

রচনাঃ প্রাত্যহিক বা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

রচনাঃ প্রাত্যহিক বা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ।

 

  • রচনাঃ প্রাত্যহিক বা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান;
  • বিজ্ঞান ও আধুনিক মানব সভ্যতা;
  • মানব কল্যাণে বিজ্ঞান;
  • বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন;
  • বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ;
  • বিজ্ঞানের জয়যাত্রা “
  • বিজ্ঞানই বর্তমান জগতের উন্নতির মাপকাঠি,
  • বিজ্ঞানের অগ্রগতিতেই সভ্যতার অগ্রগতি।”

 

 ভূমিকা:

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান – মানুষের বহু শতাব্দীর স্বপ্ন ও সাধনার ক্রম-পরিণাম আধুনিক মানব-সভ্যতা। বিজ্ঞানের কল্যাণময়ী লক্ষ্মীশ্রী আজ মানুষের সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে চলছে নব নব আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে; চতুর্দিকে শুরু হয়েছে বিজ্ঞানের জয়যাত্রার পথ-পরিক্রমা। বিজ্ঞানের অতন্ত্র সাধকবৃন্দ তাঁদের গবেষণা ও সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় করে তোলার প্রয়াসে ব্রতী হয়েছেন, বিজ্ঞানের সহায়তা ব্যতিরেকে বর্তমান যুগের সমাজ ও জীবন যেন, অচল। জীবনের প্রতিক্ষেত্রে তাই বিজ্ঞানের অমোঘ প্রভাব রয়েছে। বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অভাবনীয় বেগ, সভ্যতার অগ্রযাত্রাকে করেছে দ্রুততর ও বহুমাত্রিক। মুচিয়ে দিয়েছে দূর-দূরান্তের ব্যবধান।

বিজ্ঞান কথাটির তাৎপর্য ও উদ্ভব:

বিজ্ঞান বা ‘Science’ শব্দটির উৎপত্তি ‘Scio’ অর্থ জানা বা শিক্ষা করা। শাব্দিক অর্থে বিশেষ জ্ঞানই হল বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের দর্শনে পার্থিব জগতের নানা বিষয় নিয়ে গড়ে উঠেছে “বিজ্ঞান জগৎ’। আর বিজ্ঞানের এ জগৎ ক্রমবিবর্তনের মাধ্যমে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছে আধুনিক সভ্য ইতিহাসের মণিকোঠায় । মানুষের মন চিরকালই তার সঙ্কীর্ণ গণ্ডী অতিক্রম করে বাইরের প্রশস্ত ক্ষেত্রে নিজেকে প্রকাশিত করতে চায়। এই প্রকাশের জন্য প্রয়োজন বিশেষ জ্ঞান। এই বিশেষ জ্ঞানের সন্ধান দেয় বলেই এর নাম ‘বিজ্ঞান’।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা:

“বিজ্ঞান মানুষের একালের প্রকৃত বন্ধু। তার প্রসন্ন, দক্ষিণ দৃষ্টিই মানব কল্যাণের জয়যাত্রাকে সূচিত করবে।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

আধুনিক মানব সভ্যতার প্রধান উপকরণ বিজ্ঞান। বিজ্ঞানের অবদান ব্যতিরেকে আমাদের বর্তমান জীবন যেন গতিহীন, নিস্পন্দ। এই কারণে আধুদির যুগকে বলা হয় বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা দিকে দিকে প্রত্যূষ লগ্ন থেকে শুরু করে রাত্রিতে শয্যাগ্রহণ পর্যন্ত, মানবশিশুর জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে। দেহান্তের পর তাচ্ছাদিত হওয়া পর্যন্ত। প্রতি পদক্ষেপে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করলে বিস্মিত হতে হয়। শিল্প-শৈলীর নব নব প্রবর্তনে সেখ উৎপাদন অগতে এনেছে যুগান্তর এবং সুদূরকে করেছে আমাদের নিকটতম। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্যে জীবধাত্রী বসুধা আজ সদা হাস্যময়ী।

বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার:

আজ মানুষ বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান হয়ে মেঘকে করেছে বর্ণীভূত, বিদ্যুতকে করেছে পদানত। তার সাহায্যে সে আজ পৃথিবীতে অসাধ্য সাধন করে চলেছে। যা ছিল একদিন স্বপ্নের অগোচর, আজ তা বাস্তব রূপ ধারণ করে আধুনিক সভ্যতাকে দিয়েছে অভূতপূর্ব বিস্ময়কর সমৃদ্ধি। প্রাচীনকালে বিজ্ঞানের আলো থেকে বঞ্চিত মানুষ ছিল প্রকৃতির হাতের এক ক্রীড়নক। গুহাবাসী সেই পশুসদৃশ মানুষ যখন প্রথম পাথরে ঘষে আগুন জ্বালায় তখন থেকেই শুরু হয় মানুষের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। তারপর যেখানেই বাধার সম্মুখীন হয়েছে, কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছে, মানুষ ব্যবহার করেছে বিজ্ঞানকে। বিজ্ঞানের বলে মানুষ জল, স্থল, অন্তরীক্ষ জয় করেছে, মানুষের সংকট নিবারণের ও সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের বহু অভাবনীয় কৌশল আবিষ্কার করেছে। বিদ্যুৎ আণবিক শক্তি, কম্পিউটার প্রভৃতি বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার।

বিজ্ঞানিদের আত্মত্যাগ:

বিজ্ঞানের অগ্রগতির পেছনে যুগ যুগ ধরে বহু বিজ্ঞানীর নিরল শ্রম, মেধা, সাধনা, অধ্যবসায় জড়িত, জড়িত রয়েছে মহৎ আত্মত্যাগ। সত্যকথা বলেছিলেন বলে বিজ্ঞানী ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, ল্যাভয়সিয়কে হত্যা করা হয়েছিল গিলোটিনে। মহান বিজ্ঞানী আর্কিমিডিস, কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও প্রমুখ অসংখ্য বিজ্ঞানী সমগ্র জীবন বিজ্ঞানের পিছনে ব্যয় করেছেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই বর্তমানে মানুষ অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের যুগে উন্নীত হতে পেরেছে।

মানব জীবনে বিজ্ঞানের বহুমাত্রিক অবদান:

সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মানুষের প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিজ্ঞান জড়িত। মানবজীবন আর বিজ্ঞান একই সূত্রে গাঁথা। যাতায়াত, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, প্রকৌশলসহ জীবনের হাজারো ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বিশাল ভূমিকা রয়েছে।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান:

আজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবিসংবাদিত প্রভৃত্ব। প্রভাতের শয্যাত্যাগ থেকে নিশীথের শয্যাগ্রহণ পর্যন্ত বিজ্ঞান মানুষের অত্যন্ত অনুগত অনুচর। পথে-ঘাটে, অফিস-আদালতে, অনুষ্ঠানে-আমোদে সংবাদে-সংলাপে সর্বত্রই বিজ্ঞানে পরিব্যাপ্ত। দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে অপরিমিত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। টুথপেষ্ট, ব্রাশ, স্টোভ, হিটার, বৈদ্যুতিক পাখা, বিজলী বাতি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, তেল, সাবান, স্নো, পাউডার, পারফিউম, আয়না, চিরুনি, ইস্ত্রি, মোবাইল ইত্যাদি ছাড়া দৈনন্দিন জীবন যাপনের কথা মোটেই ভাবা যায় না। আর এটা সম্ভব হয়েছে বিজ্ঞানের কারণে।

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞান বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে এনেছে। ক্রমবর্ধমান বিপুল জনসংখ্যার দৈনন্দিন খাদ্যের চাহিদাপূরণ সহ কল-কারখানায় কাঁচামালের যোগানে কৃষির ভূমিকা অপরিসীম। আধুনিক চাষ পদ্ধতি কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন হারকে দারুণভাবে বৃদ্ধি করেছে। ট্রাক্টর, কীটনাশক, সার, উচ্চ ফলনশীল শস্য বীজ প্রভৃতি আবিষ্কারের ফলে মানুষ আজ অধিক উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে। কৃষি উৎপাদনে জল সেচে পাওয়ার পাম্প, অগভীর নলকূপ প্রভৃতি কার্যকরী ভূমিকা রাখছে । বিজ্ঞানের অবদানে শুষ্ক মরুর বুকও আজ শস্য শ্যামল হয়ে উঠেছে।

শিল্পক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

বিজ্ঞান শিল্পক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন বয়ে এনেছে। বড় বড় শিল্প কারখানা স্থাপন সম্ভব হয়েছে। কেবল একটি সুইচের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে উৎপাদন কার্যক্রম। স্বল্প সময়ে পাওয়া যাচ্ছে ব্যাপক উৎপাদন। ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের মূলে ছিল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। বর্তমান বিশ্ব সভ্যতা শিল্প উন্নয়নেরই ফলশ্রুতি।

 চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সাফল্যগুলোও বিস্ময়কর কম নয়। জন্মপূর্ব রোগ নির্ণয়ে সাফল্যের ক্ষেত্রে বড় রকমের উত্তরণ ঘটেছে। জিন প্রতিস্থাপন চিকিৎসা প্রয়োগিক ক্ষেত্রে এক বিশাল সম্ভাবনা হাজির করেছে। কর্ণিয়া, বৃক্ক, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস এবং যকৃতের মত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক সাফল্য অভাবনীয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ফাইবার অপটিক্স ব্যবহারের ফলে মানবদেহের অভ্যন্তরস্থ ফুসফুস, পাকস্থলী, বৃহদন্ত্র, ক্ষুদ্রান্ত্র ইত্যদির অবস্থা যন্ত্রের সাহায্যে অবলোকন করে নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় করা যায়। শুধু তাই নয়, অপটিক্যাল ফাইবার সংবলিত বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে ক্যান্সার নির্ণয়ের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা যায়, অনাকাঙ্খিত বস্তুসামগ্রী ও ছোট ছোট টিউমার অপসারণ করা যায়। কম্পিউটার প্রযুক্তি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে নিয়ে এসেছে সর্বাধুনিক পর্যায়ে। এর মাধ্যমে ছবি তুলে রোগ নির্ণয়ে সম্ভব হচ্ছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষার প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর প্রায় সবই বিজ্ঞানে উদ্ভাবন। বর্তমানে বিজ্ঞান শিক্ষা ব্যবস্থাকে করেছে আরও আধুনিক ও উন্নত। বিভিন্ন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের মাধ্যমে রেডিও-টেলিভিশন শিক্ষার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা এখন কম্পিউটারেই শিখতে পারছে অসংখ্য জিনিস। তাছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন বিখ্যাত লাইব্রেরির বই পাঠকরাও প্রয়োজনবোধে বিভিন্ন বিদেশী শিক্ষকের কাছ থেকে পড়ালেখা সম্পর্কে পরামর্শ গ্রহণ করতে পারছে। ক্লিক করুন

পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান:

ক্রমশই পথিবী ছোট হয়ে এসেছে। তবে আয়তনে নয় যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব সাফল্যে। বিজ্ঞানের কল্যাণে বিশ্ববাসী আজ একই গ্রামের বাসিন্দার মত বসবাস করছে। টেলিভিশন, টেলিগ্রাফ, টেলেক্স, ফ্যাক্স, ইমেইল, মুঠোফোন প্রভৃতির মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের সংবাদ মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে অন্য প্রান্তে। বিভিন্ন দেশের সংবাদ ও সংস্কৃতির পরিচয় ঘরে বসেই পেয়ে থাকি রেডিও, টেলিভিশন ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে। রকেটে মানুষ চড়ে বেড়াচ্ছে মহাকাশে। ডুবো জাহাজে মানুষ ডুবছে সমুদ্রের গভীর অতলে। বাস, ট্রাম মোটরগাড়ি, উড়োজাহাজ প্রভৃতিতে চড়ে মানুষ পাড়ি দিচ্ছে দেশ থেকে দেশান্তরে।

আবহাওয়ায় বিজ্ঞান:

স্বজ্ঞানীরা মহাকাশে প্রেরণ করেছে কৃত্রিম উপগ্রহ। যার ফলে আবহাওয়ার খবরাখবর মুহূর্তেই নির্ভুলভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃত্রিম উপগ্রহ প্রেরণের ক্ষেত্রে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেছে। তাছাড়া সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র আগাম পূর্বাভাস সম্পর্কেও জানতে পেরেছে। ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে খনিজ সম্পদ, তেল ও গ্যাসের উৎস, মাটির উপাদান ও জলজ সম্পদ সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে কৃত্রিম আবহাওয়া তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। যেমন, মানুষ এখন কৃত্রিম বৃষ্টি নামাতে পারে, রঙিন ধোঁয়া দিয়ে আকাশের গায়ে রংধনুও সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া বাঁধ দিয়ে মানুষ এখন বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থামিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে। এমন দিন খুব দূরে নয় যেদিন মানুষ আবহাওয়ার উপর কর্তৃত্ব করতে পারবে । আর তা কেবলই সম্ভব হতে পারে বিজ্ঞানের বদৌলতে ।

বিনোদনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান:

বিনোদনের ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান প্রশংসনীয়। বিজ্ঞান আজ বহুমুখী সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। রেডিও, টেলিভিশন, ডিভিডি, ইন্টারনেট, চলচ্চিত্র প্রভৃতি যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষের একঘেঁয়ে জীবনে এনে দিয়েছে অনাবিল প্রশান্তি ও আনন্দ। সুরে, গানে, নাটকে, নাচে বিজ্ঞানের বিনোদনযন্ত্র ভরে রাখছে মানুষের প্রাণ । কর্মব্যস্ত জীবনের ক্ষণিক অবকাশে এগুলো আনন্দ-বিনোদনের অন্যতম উপকরণ।

 বিজ্ঞানের বিভীষিকাময় রূপ:

বিজ্ঞান এসে জোর করে মানুষের হাতের কাজ কেড়ে নিয়েছে, তার জীবনধারণের চাবিকাঠি অপহরণ করে তাকে নিশ্চিত অনাহারের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সে তার শান্ত, সুন্দর সনাতন জীবন ছন্দের তার দিয়েছে ছিড়ে। মানুষের এই বোবা দুঃখ পৃথিবীর বুকে আজ সৃষ্টি করেছে এক দূরপনেয় ক্ষত। সে পৃথিবীর একদল মানুষকে ভোগসুখ-সর্বস্ব পশুতে পরিণত করেছে, আর একদল মানুষকে পরিণত করেছে ক্ষুধার্ত আহারান্বেষী জানোয়ারে। বিজ্ঞানের এই যন্ত্রবিভীষিকা থেকে মানুষের মুক্তি নেই, মুক্তি নেই তার সর্বনাশা পরিণাম থেকে। তাই বলা চলে, বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।

বিজ্ঞানের সর্বধ্বংসী অকল্যাণ-মূর্তি:

বিজ্ঞান যে সভ্যতার শরীরে জীবন প্রতিষ্ঠা করেছে, আজ তারই বিনাশে সে মেতে উঠেছে রুধির-তৃষাতুরা ছিন্নমস্তার মতো। মানুষের মেধা ও মনীষায় যার জন্ম, তার অতন্ত্র সাধনায় যার প্রাণ-প্রতিষ্ঠা, সেই বিজ্ঞান আজ নৃশংসভাবে তার ধ্বংসে উদ্যত। বর্তমান শতাব্দীতে সংঘটিত দুটি বিশ্ব-মহাযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা বিজ্ঞানের দানবীয় শক্তি সম্বন্ধে মানুষের মনে এনে দিয়েছে এক ঘোরতর আতঙ্ক। আজ বিজ্ঞান কী চায়? জীবন, না মৃত্যু? সে কি আজ পৃথিবীতে মানব জাতির কবর ভূমি রচনা করতে চায়? পৃথিবীর মানুষের মনে আজ জেগেছে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ।

দোষ কার? বিজ্ঞানের, না প্রয়োগ-পদ্ধতির?

কিন্তু দোষ কার? বিজ্ঞানের, না যারা বিজ্ঞানকে স্বার্থ-লোলুপ দানবীয় প্রবৃত্তি চরিতার্থতার জন্য প্রয়োগ করে, তাদের? সেই স্বার্থপর নরপিশাচদের হাতেই বিজ্ঞান বারেবারে তার কল্যাণব্রত থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পৃথিবীতে করেছে নরমেধ যজ্ঞের আয়োজন। দোষ সেই লোভী শয়তানদের সংকীর্ণ স্বার্থ-বুদ্ধির, দোষ সেই শক্তি স্পর্ধিত ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার। আজ আর বিজ্ঞানের হাত ছেড়ে দিয়ে পৃথিবীতে প্রাচীনকালের অবৈজ্ঞানিক জীবনাচরণ সম্ভব নয়। কাজেই, প্রয়োজন বিজ্ঞানের প্রয়োগ-পদ্ধতি ও সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের।

উপসংহার:

আর কতকাল বিজ্ঞান-লক্ষ্মী হৃদয়হীন স্বার্থলোলুপ নর পিশাচদের গৃহে দাসীবৃত্তি করবেন? যিনি কল্যাণের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। তিনি কি তাঁর কল্যাণপুত দক্ষিণ হস্ত সকল মানুষের মঙ্গলের জন্যে প্রসারিত করে দেবেন না? বিজ্ঞান যদি সর্বধ্বংসী মারণাস্ত্র নির্মাণ থেকে বিরত হয়ে সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণ কর্মে ব্যবহৃত হয়, তবেই মানুষের এই দুঃখ-রজনীর অবসান হবে, অভিশাপের পরিবর্তে বিজ্ঞান-লক্ষ্মীর আশীর্বাদ ঝরে পড়বে মানব জাতির মাথায়, রক্ত বিপ্লবের হাত থেকে রক্ষা পাবে জীবধাত্রী বসুন্ধরা। মানুষের মানবিক মূল্যবোধ যেন বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যায় জয়যাত্রার পথে। বিজ্ঞানের অবদানে সুনিশ্চিত হোক মানুষের সর্বময় কল্যাণ.

 

রচনাঃ প্রাত্যহিক বা দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button