Essay

 ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১

ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১

 

  •  ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১
  • অথবা, তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নে ডিজিটাল বাংলাদেশ

 ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১

 

ভূমিকা:

 ডিজিটাল বাংলাদেশ -পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে বদলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত মানুষের ধ্যান-ধারণা ও চিন্তা-চেতনা। তাই প্রতিদিন মানুষ অন্যরকম এক স্বপ্নের বীজ বুনে চলছে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ চায় নিজেকে ও নিজের দেশকে নিরাপদ রাখতে। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষ, চিকিৎসা প্রকৃতির নিশ্চয়তা বিধানের আকাঙ্ক্ষা থেকেই “ডিজিটাল বাংলাদেশ” আন্দোলনের সূচনা। স্বাধীনতার ৩৭ বছর পার হবার পরও বাংলাদেশ সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করেত পারেনি। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত রাষ্ট্রের মত বাংলাদেশও সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ অব্যাহত রেখেছে। বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তির ব্যবহার উন্নয়নে অন্যতম হাতিয়ার বলে গণ্য। বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার উন্নয়ন নিশ্চিত করার প্রধান নিয়ামকে পরিণত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ কোন স্বপ্নের নিছক কল্পনা নয়, এটা বাস্তব দুনিয়ার সম্ভব। তাই বর্তমান সরকার বিগত নির্বাচনী ইশতেহার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত করার অঙ্গীকার করে।

ডিজিটাল জগৎ কি?

টেলিকমিউনিকেশনে প্রেরিত তথ্য, কথা, টেক্স বা ছবি প্রথমে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বা তড়িৎ চুম্বক সংকেতে রূপান্তরিত হয়। তারপর দূরবর্তী কোনো প্রাপকের মেশিনে পুনরায় তথ্য, কথাত, টেক্স বা ছবিতে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়াকে বলা হয় এনালগ। কিন্তু এতে খুব বেশি দূরবর্তী স্থানে সংকেত পাঠানোর ক্ষেত্রে এবং একই সঙ্গে অনেক তথ্য পাঠাতে বিশেষ নয়েজিং এর মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এসব সমস্যা উত্তরণে উদ্ভাবিত হয় ডিজিটাল টেকনোলজি। ডিজিটাল বৈদ্যুতিক স্পন্দন বা পালস দ্রুত সিরিজে চলে এবং সে বাইনারি 0 ও ১ এ পরিণত হয় অর্থাৎ বাইনারি ডিজিট বা বিটে পরিণত হয়। ০ এবং ১ এই দুটি হচ্ছে বাইনারি সংখ্যার ডিজিট। আর ডিজিটাল সংখ্যা হলো এসব অঙ্ক সংক্রান্ত বা সংখ্যাঘটিত বিষয় আশয়। ডিজিটাল টেকনোলজির আওতায় কম্পিউটারের মাধ্যমে আন্তঃ কম্পিউটার যোগাযোগ, লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক, ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক, ই-মেইল, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কে তথ্য আদান-প্রদান করা হয়। মূলত এসবের মাধ্যমে ইনফরমেশনের সুপার হাইওয়েতে প্রবেশ করা হয়। বিজ্ঞানীদের মতে, যুগ যুগ ধরে আমাদের চেনা জগৎ থেকে সম্পূর্ন অন্য এক জগৎ এবং স্থান নিরপেক্ষ দেশ, মহাদেশ এমনকি পৃথিবী-নিরপেক্ষ এক জগৎ হলো ডিজিটাল জগৎ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা/ভিশন ২০২১:

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ১২ ডিসেম্বর, ২০০৮ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সেদিন তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা করেন যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে ২০২১ সালে বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হবে। একটি উন্নত দেশ, একটি সমৃদ্ধ ডিজিটাল সমাজ, এটি ডিজিটাল যুগের জনগোষ্ঠী রূপান্তরিত উৎপাদন ব্যবস্থা, নতুন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি সব মিলিয়ে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠন- এই স্বপ্নটাই দেখিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনে জয়ী হবার পর আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের প্রতি অনড়।

 ডিজিটাল বাংলাদেশ কী এবং কেন?

আমাদের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে ২০২০ সালের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ হিসেবে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। এই ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে আমরা সংক্ষেপে যা বুঝি তা হল- সারাদেশের কর্মকাণ্ডকে আধুনিক কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থাৎ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার দিয়ে গতিশীল করে তোলা। সরকারি অফিস-আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান স্কুল-কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়, রাজপথ ও হাইওয়ে রোডগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে কম্পিউটারের ইন্টারনেট সিস্টেম এক জায়গায় বসে বাংলাদেশের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ড এবং বহিবিশ্বকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসতে পারলে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে যে সফলতা অর্জিত হবে, তাকেই আমরা বলতে পারি ডিজিটাল বাংলাদেশ। বাংলদেশকেও ই-গর্ভনেন্স, ই-সিকিউরিটি, ই-এডুকেশন, ই-এগ্রিকালচার, ই-হেলথ, ই-কমার্স, ই-প্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, ই-এ্যাডমিনিস্ট্রেশন, ই-জার্নালিজম, ই-ট্রাফিক সিস্টেম প্রভৃতির ভিতর দিয়ে ডিজিটালাইজড অর্থাৎ ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত করা হয়।

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য:

ইন্টারনেটে পরিবেশিত তথ্যাবলী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, একটি ডিজিটাল দুনিয়া গড়ে ওঠার প্রক্রিয়া সারাবিশ্বে একটি অবিশ্বাস্য গতিতে বিকশিত হচ্ছে। তথ্যযুগ বা ডিজিটাল যুগ যে নামেই আমরা ডাকি না কেন, কৃষি ও শিল্প যুগের পর মানব সভতার জন্য আসা ও যুগের সার্বিক অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি উন্নত দেশ হিসেবে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগনের জীবনযাত্রার মান সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াশীদার ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর জীবনধারা গড়ে তুলে পুরো জাতির জন্য একটি জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য। এবং বাংলাদেশের জনগণের উন্নত জীবনের প্রত্যাশা স্বপ্ন ও আকাঙ্খা। এটি বাংলাদেশের সকল মানুষের নূন্যতম মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর প্রকৃষ্ট পন্থাটি এটি একাত্তরের স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের রূপকল্প। এটি বাংলাদেশের জন্য স্বল্পোন্নত বা দরিদ্র দেশ থেকে সমৃদ্ধ ও ধনী দেশে রূপান্তরের নির্মিত মাথাপিছু আয় বা জাতীয় আয় বাড়ানোর অঙ্গীকার। এটি বাংলাদেশে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সোপান। এটি হচ্ছে একুশ শতকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রাধিকারে ৫টি বিষয়:

সংকটের আবর্তে নিমজ্জমান অবস্থা থেকে দেশকে পুনরুদ্ধার করে একটি উন্নত সমৃদ্ধ সুখী সুন্দর জীবন গড়ে তোলাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের ব্রত। আগামী ২০২১ সালে আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বর্তমান সরকার ২০২০-২১ সাল নাগাদ এমন এক বাংলাদেশ গড়তে চায় ।

 

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অগ্রাধিকারে পাঁচটি বিষয় নিম্নরূপ:

১.দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ এবং বিশ্বমন্দার মোকাবিলায় সার্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলত নিশ্চিত করা:

দ্রব্যমূল্য: দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল তেলসহ, জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল বাজার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগপণ্য মূল্য নিমন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবারাহ ও চাহিদার তারুসালা সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বিশ্বমন্দা: বিশ্বমন্দার প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য নীতি প্রণয়ন, পরামর্শ, জার্মান তথ্য ভাণ্ডার গড়ে তোলা ও প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। বিনিয়োগ, জ্বালানি নিরাপত্তা, মুদ্রামান সুরক্ষা ও রফতানি সহায়তা এবং জনশক্তি রফতানি অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্লিক করুন

২.দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা:

দুর্নীতি দমন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে শক্তিশালী করা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বাস্তবায়ন করা হবে। ক্ষমতাধরদের বার্ষিক সম্পদের বিবরণ দিতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরের ঘুষ, দুর্নীতি উচ্ছেদ, আনোপার্জিত আয়, যুদ্ধে মহুমুখী কার্যক্রম ঋণখেলাপী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, কালো টাকা ও পেশী শক্তি প্রতিরোধ ও নির্মূলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতি দপ্তরের গণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নাগরিক সনদ উপস্থাপন করা হবে। সরকারি কর্মকাণ্ডের ব্যাপকভাবে কম্পিউটারায়ন করে দুর্নীতির পথ বন্ধ করা হবে।

৩. বিদ্যুৎ ও জ্বালানি:

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমন্বিত সার্বিক জ্বালানি নীতিমালা গ্রহণ করা হবে। তেল, গ্যাস, কয়লা, জলবিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস, জৈবশক্তি, ও সৌরশক্তিসহ জ্বালানির প্রতিটি উৎসের অর্থনৈতিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। আঞ্চলিক জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ হাজার মেগাওয়াট, ২০১৩ সালের মধ্যে ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াট উন্নীত করা হবে। তেল ও নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও আহরনের কাজে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা করা হবে। জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রেখে কয়লানীতি প্রণয়ন করা হবে।

  1. দারিদ্র্য ঘুচা ও বৈষশ্য রুখো:

আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বিস্তৃত করা হবে। ২০১৩ সালের মধ্যে দারিদ্রসীমা ও চরম দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫ ও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। বর্তমানে ৬.৫ কোটি দারিদ্যের সংখ্যা ২০১৩ সালে হবে ৪.৫ কোটি এবং ২০২১ সালে হবে ২.২ কোটি।

৫. সুশাসন প্রতিষ্ঠা ;

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ শক্ত হাতে দমন করা হবে। যুদ্ধপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করা হবে।

(ক) বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে। আইনের শাসন স্বধীন মানবাধিকার কমিশন গঠন ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে। মানবাধিকার লংঘন কাঠোরভাবে বন্ধ করা হবে। প্রতিষ্ঠা,

(খ) রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নিষিদ্ধ করা হবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা হবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে শিষ্টাচার ও সহিষ্ণুতা গড়ে তোলা হবে।

(গ) একটি সর্বসম্মত আচরণ বিধিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ করা হবে।

(ঘ) প্রবাসী বাঙালিদের জাতি গঠনে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি এবং তাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে।

(ঙ) প্রবাসীদের মেধার সদ্ব্যবহারের জন্য পরামর্শক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে।

(চ) জনজীবনে নিরাপত্তা বিধানে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহকে রাজনীতির প্রভাবমুক্ত, আধুনিক ও গড়ে তোলা হবে।

 

কর্মসংস্থান নীতিমালা :

দারিদ্র্য বিমোচন, বেকার সমস্যা সমাধান এবং নাগরিকের জীবনকে অর্থবহ করার উদ্দেশ্যে একটি সার্বিক কর্মসংস্থান নীতিমালা গ্রহণ করা হবে । যার মূল বিষয় হল- গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থান, আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ঋণ ও প্রশিক্ষণ ইত্যাদি ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ একটি সময়োপযোগী পদক্ষেপ:

আগামী ২০২১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করা হবে। ইতোমধ্যে দেশটি ওই সময় নাগাদ একটি ডিজিটাল রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের লক্ষ্য ঠিক করেছে। বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশকে উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন দেশসমূহের কাতারে স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা একটি সঠিক সিদ্ধান্ত বলে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশ যখন ডিজিটাল ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে সেই ইলেকট্রিক সংসদ আমরা দেখতে পাব, যে সংসদ জটিল কোনো মুহূর্তে আইন প্রণয়নে ইলেকট্রিক গণভোটের সহায়তায় সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জাতীয় অগ্রাধিকার:

ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রথম জাতীয় অঙ্গীকার হচ্ছে ডিজিটাল টুলস ব্যবহার করে দেশ থেকে দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ নূন্যতম মৌলিক চাহিদা পূরণ করে জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে অবকাঠামোগত অগ্রাধিকার থাকতে হবে সারাদেশের সকল ঘরে নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারা। ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত মানবসম্পদ তৈরি করা এবং কৃষি শিল্প ও ব্যবসায়ের রূপান্তর অগ্রাধিকার হিসেবে গণ্য হবে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠণে ভিশন ২০২১ এর লক্ষ্য:

১. তত্ত্ববধায়ক সরকার, গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদ: একটি নির্ভরযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা, নিয়মিত নির্বাচন, সরকারের জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠাগুলোকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা হবে।

.রাজনৈতিক কাঠামো, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও গণ-অংশায়নঃ স্থানীয় সরকারকে প্রাধান্য দিয়ে রাজনৈতিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন সাধন করা হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে স্থানীয় সরকার।

৩.সুশাসনের জন্য আইনের শাসন ও দলীয়করণ প্রতিরোধ: আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে মানবাধিকার সংরক্ষণ করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনকে দলীয়করণ মুক্ত করা হবে।

৪. রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন: সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, স্বচ্ছ 10. 8. অর্থয়ান, শিষ্টাচার ও সহনশীল আচরণ প্রতিষ্ঠা করা হবে।

৫. দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন: স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশনসহ দুর্নীতি দমনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে কার্যকর করে গড়ে তোলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইনী প্রক্রিয়ায় পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে ।

৬.নারীর ক্ষমতায়ন ও সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা: রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে নারীর সমান অধিকার ও সমান সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের নারীনীতি পুনর্বহাল ও কার্যকর করা হবে, বৈষম্যমূলক আইনসমূহের সংস্কার করা হবে এবং সংসদে প্রত্যক্ষ ভোটে নারীর জন্য ১০০ আসন ।

৭.অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্যোগ:

(ক) মৌলিক চাহিদা পুরণ: সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নাগরিকদের জন্য অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবন ধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় আয়ের গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ২০১৩ সালে ১০ শতাংশে উন্নীত হবে এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখা হবে।

(খ).জনসংখ্যা ও শ্রমশক্তির অভিক্ষেপ: ২০২১ সালে জনসংখ্যা হবে ১৬.৫ কোটি। শ্রমশক্তি ১০.৫ কোটি ২০১১ সালের মধ্যে শ্রমশক্তির অন্তত ৮৫ শতাংশের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

(গ) দারিদ্র্য নির্মূল: ২০১৫ সালে না হলে ২০১৭ সালে জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা পূরণের কার্যকর ব্যবস্থা করা হবে। বর্তমান দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র পূর্ণমূল্যায়ন করে যথোপযুক্ত পিআরএসপি প্রণয়ন করা হবে। ২০২১ সাল নাগাদ বর্তমান দারিদ্র্যের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

(ঘ).খাদ্য ও পুষ্টি: বর্তমান খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে ২০১৩ সালের মধ্যে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে। এ লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে (4) ২০২১ সালের মধ্যে দেশের ৮৫ শতাংশ মানুষের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করা হবে।

(6) স্বাস্থ্যসেবা: সকলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, ২০১৩ সালের মধ্যে সকলের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন, ২০১২ সালের মধ্যে গড় আয়ুকাল ৭০-এর কোঠায় উন্নীত, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমানো প্রভৃতি নিশ্চিত করা হবে।

(চ) শিক্ষা: ২০২১ সালের মধ্যে প্রাথমিক স্তরে নিট ভর্তির হার ১০০ শতাংশ, ২০১৭ সালে নিরক্ষরতা সম্পূর্ণ দূর, শিক্ষার মানোন্নয়ন, বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তোলা এবং শিক্ষকদের উচ্চতর বেতন সুবিধা নিশ্চিত করা হবে ।

(ছ) শিল্প: ২০২১ সালের মধ্যে শিল্পায়নের সুদৃঢ় ভিত্তি রচনা করা হবে। জাতীয় উৎপাদনে শিল্প খাতের অবদান দ্বিগুণ উন্নীত করা, কৃষি ও শ্রমঘন শিল্পের উৎপাদশীল বিকাশকে অগ্রাধিকার প্রদান, তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সর্বোত্তম বিকাশ।

(জ) জ্বালানি নিরাপত্তাঃ প্রত্যাশিত উন্নয়ন ও শিল্পপায়ন নিশ্চিত করতে জ্বালানি নিরাপত্তার দিক-নির্দেশনা সংবলিত জ্বালানি নীতি গ্রহন করা হবে। ২০১৫ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৮ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের সম্ভাব্য বিদ্যুৎ চাহিদা হবে ২০ হাজার মেগাওয়াট।

(ঝ).ভৌত অবকাঠামো: সড়ক, রেল, নৌ, বিমান, পরিবহন ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করা হবে। রাজধানীর সঙ্গে সমগ্র দেশের স্বল্প খরচে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলপথকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। পদ্মা সেতু ও কর্ণফুলিতে ঝুলন্ত সেতু/টানল নির্মাণ, বাংলাদেশকে এশীয় হাইওয়ে ও এশীয় রেলওয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা, বন্দর ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ এবং তা এশিয়ার দেশগুলোর জন্য উন্মুক্ত করা প্রভৃতি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

(ঞ) আবাসন: ২০২১ সাল নাগাদ সবার জন্য বসস্থান নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন ও উপজেলায় যৌথ স্টোর কেন্দ্রিক পল্লী নিবাস ও শহরাঞ্চলে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ আবাসন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হবে ।

(ট) পরিবেশ: আবহাওয়া পরিবর্তন ও বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে উদ্ভূত বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশকে সুরক্ষার সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা, পকিল্পিতভাবে বায়ুদূষণ প্রশমন, শিল্প ও যানবাহন নিশ্চিত করা হবে।

(ঠ) পানিসম্পদ: ভবিষ্যতে পানিসম্পদ সংরক্ষণ, বাংলাদেশের প্রাপ্যতা ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করেত বিদ্যমান পানি সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানসহ একটি সমন্বিত পানি নীতি প্রণয়ন এবং আঞ্চলিক পানি নিরাপত্তা গড়ে তোলা হবে।

ভিশন ২০২১ ও কতিপয় লক্ষ্যমাত্রা:

২০২১ বেকারত্বের হার বর্তমান ৪০ থেকে ১৫ শতাংশে নেমে আসবে। ২০২১ ভূমি খাতে শ্রমশক্তি ৪৮ শতাংশ থেকে কমে দাঁড়াবে ৩০ শতাংশে, ২০২১ বর্তমান দারিদ্রের হার ৪৫ থেকে ১৫ শতাংশে নামবে, ২০২১ দেশের ৮৫ শতাংশ নাগরিকের মানসম্পন্ন পুষ্টি চাহিদা পূরণ হবে, ২০২১ সকল প্রকার সংক্রামক ব্যাধি সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে, ২০২১ মাতৃমৃত্যুর হার ৩.৮ থেকে কমে হবে ১.৫ শতাংশ, ২০২১ প্রজনন নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারের হার ৮০ শতাংশে উন্নীত করা হবে।

উপসংহার:

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ আজকের এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য শিক্ষিত সকল নাগরিককে ডিজিটাল বাংলাদেশ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করত হবে সরকারকেও তার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কেবল আন্তরিকতা নয় ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে এর বাস্তব ধারণা নিজেদের সর্বাগ্রে জানতে হবে। তাই প্রযুক্তি নির্বাচন ও বাস্তবায়নের সুসমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। সদিচ্ছা এবং আন্তরিকতা থাকলে আওয়ামী লীগের অবদানে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ থাকবে। আগামী ২০২১ সাল নাগাদ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে একটি দায়িত্বশীল (Simple, measurable, accountable, responsive and transparent) ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ এবং জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা উপহার দেবে- জাতি এমন স্বপ্ন দেখে।

  •  ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১/
  •  ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১/
  •  ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১/
  • ডিজিটাল বাংলাদেশ-ভিশন ২০২১/

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button