গ্রন্থাগারিকের অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা উপলক্ষে একটি মানপত্র

তোমার কলেজের একজন গ্রন্থাগারিকের অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা উপলক্ষে একটি মানপত্র লেখ।
বেদনামথিত শ্রদ্ধার্ঘ্য জনাব দিলীপ কুমার ভদ্রকে-
শ্রদ্ধাঞ্জলি (মানপত্র)
হে আলোর দিশারি
নবীন বসন্তের প্রাণবন্ত বর্ণিল শোভায় সজ্জিত মধ্যাহ্নে ব্যথাতুর কোমল হৃদয়ের ভালোবাসা ও অশ্রুসিক্ত প্রীতি গ্রহণ করুন। সুদীর্ঘকাল অত্র ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠে সগৌরবে গ্রন্থগাররিকের দায়িত্ব পালন শেষে আজ বিউগলের করুণ রাগিণীতে বেজে উঠেছে তোমার বিদায়ের ব্যথিত তান। তাইতো অনাবিল প্রকৃতির শ্যামল শোভায় মন যেন বলে উঠে-
“আমি ভালবাসি যারে,
সে কি কভু আমা হতে দুরে যেতে পারে”
হে বিরাম পিয়াসী পথিক
“হাতে তুলে দিলে নিঃসঙ্গ দিন, চলে যাবে তুমি?
জানা কি হয়নি আজো-
ব্যস্ততার বাড়াবাড়ি ভীরে, জ্বালাও ঝঞাটে
ওষ্ঠাগত প্রাণ তবু সহনীয় সে বাস্তব; তুমিহীনতার চেয়ে”
জীবনের বাঁকে বাঁকে মোড় ফেরা নিয়মকে সাক্ষী রেখে তুমি তো চললে। এবার থেকে কোথায় পাবো দুর্ভর দায়িত্ব পালনের যন্ত্র, শ্রমসাধ্য কর্মের শক্তি প্রেরণা? তোমার সাহচার্য ধন্য আমরা যে ভুলেই বসেছিলাম কর্মময় জীবন মানে সংঘাত আর সমন্বয়ের খেলা।
হে প্রাজ্ঞ কর্মবীর
তুমি এলে, জয় করলে। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে, আমরা তোমার মত একজন কর্মঠ, উদারচরিত্র, সুদক্ষ ও প্রজ্ঞাবান গ্রন্থাগারিক পেয়েছি। জটিল-কঠিন দায়িত্বে গূঢ় আমন্ত্রণে আস্থা অধীর, অন্তর জুড়ে অনিঃশেষ অতৃপ্তির নিঃশব্দ ধূম্র সঞ্চার, তবু বাইরে ধরে রেখেছো পরিশুদ্ধ প্রশান্তির অনাবিল মুখাবয়ব। তোমার অন্তকরণ ছিল পবিত্র, তোমার মধুর ব্যবহারে, আচার-আচরণে ও চারিত্রিক মাধুর্যে আমাদের মাঝে গড়ে উঠেছিল অনাবিল এক অমরাবতী। তোমার স্বভাব সুলভ শান্ত উদার সহজ সরল মানবিক আচরণ সকলকে মুগ্ধ করেছে। অবিরাম কর্মের প্রেরণায় চির চঞ্চল তুমি। কোন সংকীর্ণ স্বার্থপরতা তোমাকে আকৃষ্ট করেনি। ক্লিক করুন মানপত্র
হে ঋত্বিক
শুধু গ্রন্থাগারের কাজে নয় এ ছাড়াও কলেজের নানা কর্মযজ্ঞে ছিল তোমার অবাধ পদচারণা। তুমি নিরলস পরিশ্রমে আমাদের কলেজকে তথা জাতিকে কানায় কানায় ভরে দিয়েছো ফুলে-ফসলে শস্যে-সম্পদে।
“তোমার কীর্তির চেয়ে তুমি যে মহৎ
তাই তব জীবনের রথ পশ্চাতে ফেলিয়া
চলে কীর্তির তোমার ।”
হে ভাব সমাচ্ছন্ন বিদায়ী
তুমি যাবে সরে নীম দূরত্বে, আমাদের বুকের পাটাতন তলে জাগিয়ে বাষ্পোচ্ছ্বাস-ভাবতে পারিনা, এ জন্যই বেদনা বিগলিত সুরের নির্ঝর আজ আমাদের শিরায় শিরায়। নিভৃত বৃক্ষতটে মাথা কুটে মরে বেদনার ঢেউ, মরুর হয়রানি চেতনায়। মনে হয় যেন কোন সবুজ আশ্রয় নেই পৃথিবীতে। যাবার আগে বলে যাও-এ যাওয়া-যাওয়া নয়, আরো কাছাকাছি আসা, শেকড়ের পথ বেয়ে। তুমি থাকবে আমাদের স্মৃতিতে, আমাদের চেতনায়, আমাদের বিশ্বাসে এই বিদ্যাপীঠের চার দেয়ালের মাঝে। বিধাতার কাছে প্রার্থনা তাঁর অপার করুণায় পূর্ণ হোক তোমার পারিবারিক জীবন ও ব্যক্তিগত জীবন আর আনন্দে ভরে উঠুক তোমার সৌন্দর্য সমৃদ্ধ সুস্থ বাকী জীবন। তাই রবীন্দ্রনাথের ভাষায় আমরাও বলছি- (মানপত্র)
“চলে যাবে সত্তারূপে
সৃজিত যা প্রাণেতে কায়াতে
রেখে যাবে মায়ারূপ
রচিত যা আলোতে ছায়াতে। “
বিনয়াবনত-
শিক্ষক পরিষদ
তারিখঃ২মে ২০২৩ টংগী সরকারি কলেজ গাজীপুর
- গ্রন্থাগারিকের অবসরজনিত বিদায় সংবর্ধনা উপলক্ষে একটি মানপত্র