Essay
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা
- ইন্টারনেট অথবা
- ইন্টারনেট ও বর্তমান বাংলাদেশ অথবা
- তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ অথবা
- তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ অথবা
- বিজ্ঞান ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি অথবা
- শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
[ব. বো-১৬, কু. বো-১৬, দি বো-১৬, রা. বো-১৬, কু. বো-১৭, রা. বো-১৭, সকল বোর্ড-২০১৮)
ভূমিকাঃ
আজকের যুগ বিজ্ঞানের পরম সাফল্যের যুগ। বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর অবদান হল কম্পিউটার। মানব সভ্যতার কোনো এক শুভক্ষণে বিজ্ঞানের যে যাত্রা সূচিত হয়েছিল, তা আজ চরম সার্থকতায় এসে উপনীত হয়েছে। এ সার্থকতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন কম্পিউটার। বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ তথা যুগান্তকারী ব্যবস্থার নাম ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হলো মূলত আন্তঃকম্পিউটার যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর ফলে পৃথিবীর দূরত্ব একেবারেই কমে এসেছে। গোটা পৃথিবী পরিণত হয়েছে একটি Global Village-এ। বিশ্বায়ন ধারণায় তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ ইন্টারনেট। মানবজীবনের বিচিত্র কর্মকাণ্ডে ইন্টারনেটের ব্যবহার জীবনকে করে তুলেছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ, পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যান-ধারণা। কম্পিউটার ছিল বিজ্ঞানের এক বিস্ময়। মূলত, মানবসভ্যতার বিস্ময়কর বিকাশে বিজ্ঞান যে অনন্য ভূমিকা পালন করছে তার গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হলো কম্পিউটার। এখন কম্পিউটার প্রযুক্তির সাথে ইন্টারনেট প্রযুক্তি যুক্ত হয়ে এ বিস্ময় অবদানরূপে প্রকাশ পাচ্ছে। জীবনের ব্যাপক ও বহুমুখী কাজে এখন ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়ে আধুনিক ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিকে মানব কল্যাণে বিপুলভাবে সম্ভবনাময় করে তুলেছে।
ইন্টারনেট কী?
ইন্টারনেট কম্পিউটার বাহিত এমনই এক সংযোগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে আক্ষরিক অর্থে সারা বিশ্বই চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস ইন্টারনেট নামে পরিচিত। এটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সমূহের একটি বিশ্বব্যবস্থা। কোনো নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের সঙ্গে অন্য কোন নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই ইন্টারনেটের কাজ। বিভিন্ন নেটওয়ার্ক একত্র হয়ে পৃথিবীব্যাপী যে নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি হয় তাকে ইন্টারনেট বলে । ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত যে কোন ব্যক্তিগত কম্পিউটার বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহে সক্ষম। গোটা বিশ্বের কোটি কোটি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে।
ইন্টারনেটের প্রকারভেদ:
আন্তঃকম্পিউটার যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা ইন্টানেটের ব্যবহারের জন্য কতগুলি পদ্ধতি আছে। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলোঃ
১. ই-মেইল: যে কোন ধরনের সংবাদ আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা খুবই কার্যকর। এ প্রক্রিয়ায় খুব দ্রুত অর্থাৎ ফ্যাক্সের দশ ভাগের একভাগেরও কম সময়ে এবং কম খরচে তথ্যাদি পাঠানো যায়।
২. ওয়েব: ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে যে তথ্য রাখা হয়েছে সেগুলো ব্যবহারের পদ্ধতিকে ওয়েব বলে।
৩. নেট নিউজ: ইন্টারনেটের তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষিত সংবাদ যে কোন সময় এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উন্মুক্ত করা যায়।
8. চ্যাট: এ প্রক্রিয়ার সাহায্যে একাধিক ব্যক্তির সাথে একই সময়ে কথা বলা যায় বা আড্ডা দেখা যায়।
৫. আর্কি: আর্কির কাজ হলো তথ্যসমূহকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূচি আকারে উপস্থাপন করা ।
৬. গোফার: তথ্য খুঁজে দেয়ার একটি পদ্ধতি, যার সাহায্যে গুরুত্বানুযায়ী তথ্যের সমন্বয় সাধিত হয়।
৭.ই-ক্যাশ: ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ই-ক্যাশ পদ্ধতি বলে। আসলে ই-ক্যাশ অনেকগুলো আধুনিক লেনদেনের সমষ্টি ।
ইন্টারনেটের উদ্ভব:
১৯৬৯ সালে বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের কারণে দুই দেশের সমর বিশেষজ্ঞরা পরস্পরকে ভয় করছিল। টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে কম্পিউটার থেকে কম্পিউটারে তথ্য আদান-প্রদানের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন যা American Defence Network বা সংক্ষেপে ARPANET বলে পরিচিত। ১৯৬৯ সালে উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তিই ইন্টারনেট। প্রথমদিকে এর নাম ছিল ‘মিলনেট’ । সত্তর ও আশির দশকে যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় এই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত হয়। নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যারের ফলে ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা ও প্রসার দ্রুত বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে ইন্টারনেটের আওতায় বিশ্বব্যাপী আট কোটি (৮০ মিলিয়ন)-র মতো কম্পিউটার ব্যবহারকারী রয়েছে। এ সংখ্যা প্রতি মাসে শতকরা ১০ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইন্টারনেটের সম্প্রসারণ:
আমেরিকার প্রতিরক্ষা কর্তৃপক্ষ চারটি কম্পিউটারের মাধ্যমে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল তার নাম ছিল ‘ডার্পানেট’। পরবর্তী তিন বছরে কম্পিউটারের সংখ্যা বেড়ে ছত্রিশে দাঁড়ায়। চাহিদা বাড়ার ফলে ১৯৮৪ সালে আমেরিকার ন্যাশনাল সাইন্স ফাউন্ডেশন সর্বসাধারণের জন্য ‘নেস্কেনেট’ নামে একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে । তিন বছরের মধ্যে এ যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাপক ভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এটি তখন গবেষণার কাজে তথ্য বিনিময়ে সীমাবদ্ধ ছিল। এর সাথে অনেক ছোট বড় নেটওয়ার্ক যুক্ত হয়ে সমস্যার সৃষ্টি করে। সমগ্র ব্যবস্থাটি নিয়ন্ত্রনের জন্য নব্বই-এর দশকের শুরুতে কেন্দ্রীয় নেটওয়ার্ক হিসেবে ইন্টারনেট গড়ে তোলা হয়। ১৯৯৩ সালে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য ইন্টারনেটকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। অল্পদিনের মধ্যে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত হয় কোটি কোটি সদস্য। এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ:
ইন্টারনেটে প্রবেশের জন্য চারটি জিনিসের প্রয়োজন হয়। যেমন: (ক) কম্পিউটার (খ) মডেম (গ) টেলিফোন লাইন এবং (ঘ) ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার। নিয়ে এগুলোর কাজ বর্ণনা করা হল:
কম্পিউটার: বিভিন্ন তথ্য টাইপ করতে কম্পিউটার সাহায্য করে এবং তথ্যগুলি নিজের মেমোরিতে রাখে। এরপর প্রাপকের কাছে তথ্য পাঠানোর প্রাথমিক কাজগুলো নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন করে।
মডেম: এই মডেম সাধারণত টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য পাঠানোর উপযোগী করা উদ্দেশ্যে, এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে সংশ্লিষ্ট তথ্য ডিজিটাল থেকে এনালগে এবং এনালগ থেকে ডিজিটালে পরিবর্তন করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
টেলিফোন লাইন: এনালগের তুলনায় ডিজিটাল টেলিফোনে তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হয়।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP): এদের কাজ অনেকটা পোস্ট অফিসের মতো। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশের অফলাইন ইন্টারনেট চালু হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কোরনা প্রতিষ্ঠানের সার্ভারকে মিডিয়া হিসেবে নিয়ে এটি চালু ছিল। ১৯৯৬ সালের ৪ জুন VSAT চালুর মাধ্যমে প্রথম অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে ISN (Information Services Network)। এরপর গ্রামীণ সাইবারনেট, BRAC, BDMAIL, PRADESHTA NET, AGNI SYSTEM ইত্যাদি সংস্থাসহ মোট ১২টি সংস্থা বর্তমানে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করে।
তথ্যবিপ্লব ইন্টারনেট:
তথ্য আদান-প্রদানে ইন্টারনেট যুগান্তকারী বিপ্লব এনেছে। ইন্টারনেট চোখের পলকে বিশ্বের যে কোনো জায়গায় তথ্য পাঠাতে বা তথ্য এনে দিতে সক্ষম। নিম্নের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট কাজ করে:
১. লেখাপড়া, শিক্ষা, গবেষণার ক্ষেত্রে বই অত্যন্ত জরুরি। তবে সব বই সব সময় নাগালের মধ্যে পাওয়া যায় না। কিন্তু ইন্টারনেটের ফলে এখন ঘরে বসেই বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের লাইব্রেরিতে প্রবেশ করা যায় এবং প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করা যায়।
২. ইন্টারনেট ভ্রমণবিলাসীদের জন্য বন্ধু স্বরূপ। এটি ভ্রমণ স্থানের আবহাওয়া, হোটেল রিজার্ভ, রেন্ট এ কার, প্লেনের টিকিট বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে।
৩. ইন্টারনেট ডাক্তার বা চিকিৎসা ব্যবস্থাকে করেছে সহজলভ্য এবং সুলভ। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ করা যায় পৃথিবীর ভালো ভালো চিকিৎসকদের সাথে। ফলে ঘরে বসেই পেতে পারি উন্নত চিকিৎসা।
8. আইনগত পরামর্শ বা কোনো রেফারেন্স প্রয়োজন হলে সেই আইনজীবী বা আইন ফার্মে ইন্টারনেট কমান্ড করলে তার তথ্যাদি ঘরে বসেই পাওয়া যায়। এতে সময়, অর্থ, শ্রম বহুগুণে সাশ্রয় হয়।
৫. ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোনো দেশের রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া, অর্থনৈতিক অবস্থা মুহুর্তের মধ্যে জানা যায়।
৬. বিনোদন হিসেবে গান শোনা, খেলা ও সিনেমা দেখা প্রভৃতি ঘরে বসেই সম্ভব ইন্টারনেটের মাধ্যমে।
বাংলাদেশের ইন্টারনেট চালু:
বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবস্থা চালু হয় ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বর মাসে। তখন এর ব্যবহার ছিল সীমিত এবং কেবল ই-মেইলের প্রয়োগ ছিল। ১৯৯৫ সালের ১৫ জুন থেকে অনলাইন সংযোগ দেয়া শুরু হলে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির বিশাল জগতে প্রবেশ করে। ২০০০ সালের শুরুতে ফাইবার অপটিক কেবল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ বড় শহরগুলোকে সংযুক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। ঢাকার মগবাজার ও গুলশানের টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মধ্যে ফাইবার অপটিক সংযোগ আছে। এছাড়া কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক এবং সরকারের প্রশাসনিক দপ্তরে এর ব্যবহার ব্যাপক।
বর্তমান অবস্থা:
বিশ্বব্যাপী তথ্যবিপ্লবের জাগরণে বাংলাদেশ ও ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে বলা যায়। কিন্তু বাস্তব অবস্থা অনেকটা ভিন্ন। এখন পর্যন্ত গ্রাহকের সংখ্যা পাঁচ হাজার, যার ৮০ ভাগের বেশি পরিচালনা করে থাকে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত ই-মেইলের জন্যই ব্যবহার করে থাকে ইন্টারনেট। এছাড়া অন্যান্য যে খাতে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে সেগুলো হলো- সহজ ও কম খরচে যোগাযোগ, তথ্য প্রাপ্তি, ফ্যাক্স, ফোন, ডাটা এন্ট্রি, ট্রাভেল এজেন্সি, চিকিৎসা, গবেষণা, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, রপ্তানিমুখী শিল্পে অর্ডার গ্রহণ, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইন্টারনেটের বিপুল তথ্যভাণ্ডারের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন তথ্য বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন। প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তির। বাংলাদেশে সরাসরিভাবে ইন্টারনেট সুবিধাদানের চিন্তাভাবনা চলছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইন্টারনেটের ভূমিকা:
তথ্য প্রযুক্তিতে উন্নয়নের যে জোয়ার বইছে পৃথিবীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশলোর মধ্যে ভারতে তার প্রভাব অনেক আগে পড়লেও আমরা তা থেকে অনেক পিছনে পড়ে আছি। তথ্যপ্রযুক্তিকে মূলধন হিসেবে ব্যবহার করে এবং মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, ভারত, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশ অনেক এগিয়ে গেছে। অথচ আমাদের নির্বুদ্ধিতার কারণে আজ আমরা তথ্যের সুপার হাইওয়েতে যুক্ত হতে পারছি না। আবার সরকারের অনিহার কারণে ফাইবার অপটিকস ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছি আমরা। তাই আমাদের প্রচুর টাকা খরচ করে ব্যবহার করতে হচ্ছে ভিস্যাটের লাইন। অথচ ভারত এসব সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি রূপি উপার্জন করছে। তবে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি খাত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে, বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে। দেশে কম্পিউটার সফটওয়্যার তৈরি বেশ বেড়েছে। প্রতিবছর কোটি কোটি টাকার সফটওয়্যার বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তি নীতিমালায় আগামী ৩ বছরের মধ্যে গড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার সফটওয়্যার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তথ্যবিপ্লবে সরকারের পদক্ষেপ:
বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল তথ্যপ্রযুক্তির সম্ভাব্য সর্বোচ্চ বিকাশের অঙ্গীকারের মাধ্যমে মানব সম্পদ উন্নয়ন। বাংলাদেশ সরকার এ লক্ষ্যে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে-
১. তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকার আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই দেশের প্রতিটি জেলায় ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। অতি শীঘ্রই থানা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।
২. প্রযুক্তি নীতিমালা অনুমোদন করেছে। এ নীতিমালার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সরকার আইসিটি ইনকিউবেটর স্থাপন করেছে।
৩. বিদেশে বাংলাদেশের সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তি পণ্য বাজারজাতকরণের জন্য সরকার আইসিটি বিজনেস প্রমোশন সেন্টার স্থাপন করেছে।
৪. তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের লক্ষ্যে সরকার ঢাকার অদূরে কালিয়াকৈরে ২৬৫ একর জমিতে ‘হাইটেক পার্ক স্থাপন করেছে।
৫. দেশের সব অঞ্চলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রসার এবং এ বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে কম্পিউটার/শিক্ষার কোর্সের প্রবর্তন এবং বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে।
ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা/উপকারিতা:
বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট এর বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। আজকাল ইন্টারনেট যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক বিস্ময়কর ভূমিকা পালন করছে। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধুলা, বিনোদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রাপ্তে তথ্যাদি আদান-প্রদানের মাধ্যমে ইন্টারনেট এক যুগান্তকারী অবদান সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশেও ইন্টারনেট ব্যবহারে পিছিয়ে নেই। ১৯৯৬ সালের দিকে বাংলাদেশ প্রথম ইন্টারনেটের সঙ্গে সম্পর্ক টিএনটি, আই.এম.এন, রয়টারসহ মোট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে ভিস্যাট স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা।
ইন্টারনেটের অপকারিতা:
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ এটি নির্ভর করে ব্যক্তি সাধারণের গ্রহণযোগ্যতার ওপর। ইন্টারনেটের কিছু খারাপ দিক রয়েছে। এর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দেয়া, পর্ণ ছবি দেখা, জুয়া খেলা ইত্যাদির প্রসার বাড়ছে। কেউ কেউ কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করে তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে বিশ্বের লাখ লাখ কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ১৯৮৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ‘ইন্টারনেট ওয়ার্ম’ নামক ভাইরাস প্রবেশ করিয়ে কয়েক হাজার কম্পিউটার ক্ষতিগ্রস্থ করে। চেরনোবিল ভাইরাস’ নামক একটি ভাইরাস বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে আক্রমণ চালিয়ে সারা বিশ্বে লাখ লাখ কম্পিউটার অকেজো করে দেয়।
আমাদের করণীয়:
গত দু দশকে বিশ্বজুড়ে ঘটেছে অভাবনীয় সব পরিবর্তন। শিল্প, ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থনীতিতে এবং জীবনযাপন পদ্ধতিতে পাল্টে দিচ্ছে এ তথ্যবিপ্লব। আর এর সুবিধা ভোগ করছে বিশ্বের ধনী দেশগুলো। ইলেকট্রনিক বাণিজ্যের যে সিংহ দুয়ার খুলতে শুরু করেছে তার সুফল ও ধনী দেশগুলোই বেশি ভোগ করছে। তথ্য প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার ধনী দেশগুলোর পক্ষে করা সম্ভব হয়েছে মূলত তাদের রাষ্ট্র, বাজার এবং সমাজের উদ্যোগী ও সূদুরপ্রসারী ভূমিকার কারণে। তথ্য প্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়া দেশগুলোর সাথে উন্নত দেশগুলোর আইসিটি সেক্টরে এক ধরনের বৈষম্য ইদানীং আলোচিত হচ্ছে, যাকে বলা হয় ডিজিটাল বৈষম্য। তাই এ প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে বাংলাদেশকে টিকে থাকতে হবে যোগ্যতা দিয়ে এবং তথ্যপ্রযুক্তির নতুন নতুন কৌশল আয়ত্তে এনে।
উপসংহার:
ইন্টারনেট প্রযুক্তি আধুনিক জীবনযাত্রাকে অত্যন্ত গতিশীল ও প্রাঞ্জল করে তুলেছে। এই প্রযুক্তি যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত করছে। ইন্টারনেট বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর অবদান। এটি বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অন্য প্রান্তের মানুষের যোগাযোগ অকল্পনীয়রূপে সহজ করে দিয়েছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে বিশাল বিশ্ব একটি পরিবারের রূপ পরিগ্রহ করেছে।
- আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা
- আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা
- আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা